সুন্নাহ্কুরআন আল্লাহ্ তাআলার বাণী যা প্রত্যাদিষ্ট হয়েছিল নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর। তিনি (স.) স্বীয় সাহাবাবর্গকে দিয়ে মৌখিকভাবে ও লেখার মাধ্যমে কুরআন সংরক্ষিত করেছিলেন। কুরআন ছাড়াও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকিছু বলেছেন বা করেছেন সবই সাহাবা কর্তৃক সংরক্ষিত করা হয়েছিল। সুন্নাহ্ বলতে বোঝায় রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কর্ম এবং তাঁর মৌনসমর্থনপুষ্ট কার্যাদিকে। সুন্নাহ্ সাধারণত হাদিস নামে পরিচিত। কুরআন ও সুন্নাহ্ উভয়ই অহি বা আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ হতে প্রত্যাদেশ। [১]
সুতরাং মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য আবশ্যক কুরআন ও সুন্নাহ্ দুটির প্রতিই বিশ্বাস স্থাপন করা এবং দুটোকেই শরয়ি আইনের উৎস হিসেবে গ্রহণ করা। দুটোই মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে প্রত্যাদেশ। কুরআন আল্লাহ্ তাআলার প্রকৃত শব্দ দ্বারা সংকলিত হয়েছে, অপরপক্ষে সুন্নাহ্ আল্লাহ্র রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শব্দ, কর্ম ও সমর্থনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। আরেকটি পার্থক্য হলো : কুরআন সালাতের মধ্যে নিয়মমাফিক পাঠ করা হয়, যেখানে সুন্নাহ্ পাঠ করা হয় না।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। কিন্তু সাপ্রতিক কিছু স্বাধীনচেতা মুসলমান তাদের প্রবৃত্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ইসলামের বেশ কিছু জিনিসকে অস্বীকার করতে চাই। আরও দুঃখের বিষয় হলো যে, অনেকেই চাই বিশেষভাবে সুন্নাতকে অস্বীকার করতে। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তি। কারণ রসূলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমাকে প্রদান করা হয়েছে কুরআন এবং তারই মতো আরও কিছু জিনিস। তবে এমন একটা সময় আসবে যখন পালঙ্কে ঠেস লাগিয়ে উপবিষ্ট লোক বলবে : তোমরা শুধু কুরআনের অনুসরণ করো; ওতে যা অনুমোদিত পাবে তা অনুমোদিত হিসেবে গ্রহণ করো এবং যাকিছু নিষিদ্ধ পাবে তা নিষিদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করো। অথচ রসূলুল্লাহ্র নিষেধাজ্ঞা আল্লাহ্ তাআলার নিষেধাজ্ঞার মতোই”। [২]
আভিধানিক অর্থসুন্নাহ্ একটি আরবি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ পথ বা রাস্তা। বিভিন্ন জায়গায় সুন্নাহ্ শব্দটি তার আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। লিসানুল আরাবের লেখক এর অর্থ করেছেন : “পথ, পদ্ধতি, নিয়মিত অভ্যাস, স্বভাব”। মনে হচ্ছে, এই বিভিন্ন আভিধানিক সংজ্ঞাগুলির জন্য প্রয়োজন কর্মের একটি ধারাবাহিক রূপ যেন মনে হয় যে, এটি একটি সুন্নাহ্।
এও উল্লেখযোগ্য যে, এই অর্থে শব্দটি যে কারো জন্য প্রযুক্ত হতে পারে এবং তা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। তাই আমরা বলতে পারি, জীবনের সুন্নাহ্, আদমসন্তানের সুন্নাহ্, মুসলমানদের সুন্নাহ্ ইত্যাদি। কিন্তু যখনই শব্দটি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত হয় তখন এর একটি অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয় এবং প্রসঙ্গ বদলে যায়।
ইসলামি পরিভাষাইসলামের দৃষ্টিতে এটা আইনের একটা প্রধান উৎস যা নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কর্ম ও সমর্থন হতে গৃহিত। মুসলমান হিসেবে আমাদের বিশ্বাস যে, যে আইন নিয়ে আমাদের নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেছিলেন তা আমাদের স্রষ্টা আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ হতে একটি ঐশী প্রত্যাদেশ। কিন্তু অনেক মানুষের ধারণা, যেহেতু কুরআন আল্লাহ্ তাআলার আক্ষরিক শব্দ তাই ওটাই শুধু ঐশী প্রত্যাদেশ। এই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভুল ও ভ্রান্ত এবং স্বয়ং কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক। নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা বলছেন : “তোমাদের সঙ্গীপথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি।এবং তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।কুরআন অহি,যা প্রত্যাদেশ হয়”। [সূরা নাজ্ম ৫৩:২-৪]
সুন্নাত হয় বাধ্যতামূলক হবে অথবা ঐচ্ছিক। আস-সুবকি সুন্নাতের সংজ্ঞায় বলেছেন : “পারিভাষিক অর্থে সুন্নাহ্ হলো : যা নবির বাণী হতে বাধ্যতামূলক বা প্রাধান্যযোগ্য বলে পরিচিত”। [আল-ইবহাজ ফি শারহি আল-মিনহাজ : ১/৩৬] [৩]
কেন আমাদের সুন্নাত প্রয়োজন ?নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের পূর্বে এই গ্রহের প্রতিটি জাতি একজন করে রসূল বা দূত পেয়েছিল। এই রসূলগণের উদ্দেশ্য ছিল কীভাবে বিশুদ্ধরূপে আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত করা যায় মানুষকে তার পথনির্দেশনা দেওয়া। নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। যদি আমাদেরকে সরাসরি কুরআন দেওয়া হতো তাহলে আমরা যারা মুসলমান, তাদের অধিকাংশই নিজের মতো করে এই গ্রন্থটির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করত এবং পথভ্রষ্ট হয়ে যেত। তাই আল্লাহ্ তাআলা তাঁর অপার কৃপায় একজন মহান দূত প্রেরণ করলেন যিনি এই কুরআনের ব্যাখ্যা করবার জন্য আগমন করেছিলেন, যেন এই পৃথিবীর মানুষ তাদের স্রষ্টার ভালোবাসার কথা বুঝতে পারে : “ এবং তোমারকাছে আমি স্মরণিকা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি,যাতে তুমিলোকদের সামনে ওইসব বিষয় বিবৃত করো,যেগুলো তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে,যাতে তারা চিন্তাভাবনাকরে”। [সূরা নাহ্ল ১৬:৪৪]
রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাণী, কর্ম, অর্থাৎ সুন্নাতের মাধ্যমে কুরআনের ব্যাখ্যা করেছেন। এইভাবে তিনি (স.) এই মহাগ্রন্থের বোধ ও বাস্তবায়নের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত প্রদান করেছেন। এই কারণেই আল্লাহ্ তাআলা বলছেন : “যারা আল্লাহ্ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে,তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে অনুপম আদর্শরয়েছে”। [সূরা আহ্যাব ৩৩:২১] তাই আমাদের জন্য সুন্নাত অত্যাধিক প্রয়োজনীয়। এটা ছাড়া আমাদের ধর্ম অসম্পূর্ণ। মুসলমান হিসেবে এই নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা করা যাবে না, কারণ সুন্নাত আমাদের জন্য ঐশী বিশ্লেষণ। কুরআন আমাদেরকে আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছে সালাত, সিয়াম, যাকাত ইত্যাদির মাধ্যমে, কিন্তু কার্যত এই কার্যগুলি কীভাবে সম্পাদন করতে হবে কুরআন আমাদেরকে তা বলে দেয়নি। আল্লাহ্ তাআলার অসীম প্রজ্ঞা যে, তিনি নবি ও তাঁর শিক্ষার আকারে আমাদেরকে একটি ব্যবহারিক দৃষ্টান্ত দান করেছেন। নবি (স.)-এর কুরআনের আনুগত্য ও বাস্তবায়ন ছিল দৃষ্টান্তমূলক। যেমন তাঁর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর পত্নী আয়েশা (রা.) বলেছিলেন : “তাঁর চরিত্র ছিল স্বয়ং কুরআন”। [মুসলিম : ১৬২৩]
সুন্নাতের অনুসরণ কি অপরিহার্য ?নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাআলার আনুগত্য অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা বলেন : “যে ব্যক্তি রসূলের আনুগত্য করে সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্র আনুগত্য করে”। [সূরা নিসা ৪:৮০] এখান থেকে স্পষ্ট যে, আল্লাহ্ তাআলার আনুগত্য রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের মাধ্যমে সম্ভব। নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে কেউ আমার অবাধ্যতা করবে সে আল্লাহ্র অবাধ্যতা করবে”। [সহি বুখারি : ২৫১] এখান থেকে পরিষ্কার যে, সুন্নাতের অনুসরণ প্রতিটি মুসলমানের জন্য অপরিহার্য।
এই অপরিহার্যতা ও আবশ্যিকতা আরও জোরালোভাবে প্রকটিত হয় যখন আল্লাহ্ তাআলা বলেন : “অতএব,তোমার পালনকর্তার শপথ !তারা ঈমানদার হবে না,যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে তারা নিজের মনের মধ্যেকোনোরকম সংকীর্ণতা পাবে নাএবং তা হূষ্টচিত্তে গ্রহণকরে নেবে”। [সূরা নিসা ৪:৬৫]
“আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনোবিষয়ে ফায়সালা প্রদান করলেকোনোঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্তের এখতিয়ার থাকবে না। যে ব্যক্তিআল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়”। [সূরা আহ্যাব ৩৩:৩৬] মুসলমান হিসেবে আমরা জানি যে, যখনই আল্লাহ্ বা তাঁর রসূল কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন তখন সেটা আমাদের জন্য সর্বদা ফলপ্রসূ হয়, যদিও আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি না। সুতরাং রসূলুল্লাহ্র আনুগত্য আমাদের জন্য শুধুই লাভদায়ক, তা আমাদের উপর অন্যায় ও অবিচার নয়, যেমন কিছু লোক মনে করে।
আবশ্যিকভাবে স্মরণীয় যে, মুহাম্মাদ শুধু আল্লাহ্র নবিই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন সপ্তম শতাব্দীর একজন আরবীয় মানুষ। তাঁর ব্যক্তিগত রুচি ও পছন্দ ছিল ঠিক তেমনই যেমন ছিল অন্যদের। এই পছন্দগুলি পরিষ্কারভাবে ওই ইসলামি আইন থেকে আলাদা করা হয় যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক। সুতরাং তাঁর ব্যক্তিগত সুন্নাহ্ পরিষ্কারভাবে শরয়ি সুন্নাহ্ থেকে পৃথক যা নিয়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। এর একটি উদাহরণ : রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখলেন, মদিনাবাসীরা কৃত্রিম উপায়ে খেজুর গাছের পুষ্পরেণু এক গাছ থেকে আরেক গাছে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি (স.) তাদের এরকম করার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তাঁরা উত্তর দিলেন, এটা তাঁদের অভ্যাস। তিনি (স.) তাঁদেরকে পরামর্শ দিলেন : এটা না করলেই হয়তো ভালো। তাই তাঁরা এমন করা বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু ওই বছর তাদের ফসলের ফলন সাংঘাতিকভাবে কম হলো। যখন তাঁরা তাঁকে এই ব্যাপারে বললেন তখন তিনি উত্তর দিলেন : “আমি শুধু একজন মানুষ। যখন আমি তোমাদেরকে তোমাদের দ্বিনের বিষয়ে কোনো নির্দেশ দেবো তখন তোমরা তা গ্রহণ করো, কিন্তু যখন আমি তোমাদেরকে আমার নিজস্ব অভিমতের ভিত্তিতে কোনো নির্দেশ দেবো, তখন জেনে রেখো আমি কেবল একজন মানুষ”। [সহি মুসলিম : ৫৮৩১]
ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ইবাদতের যোগ্য শুধুমাত্র আল্লাহ্ তাআলা। এ কারণেই একজন মানুষ ছাড়া মুহাম্মাদের অন্য কিছু হওয়ার সম্ভাবনা সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক। যেহেতু তিনি আল্লাহ্ তাআলার রসূল তাই আমাদের বিশ্বাস যে, তাঁর সুন্নাহ্ অব্যর্থ। কিন্তু একই সময় আল্লাহ্ তাআলার এই বাণীকে স্মরণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ ভারসম্য আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে : “বলো :আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ,আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের উপাস্যএকমাত্র উপাস্য। অতএব,যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করেসে যেনসৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে অংশীনা করে”। [সূরা কাহ্ফ ১৮:১১০] প্রকৃত মুসলমান মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করবে, তাঁর ইবাদত করবে না। [৪]
সুন্নাতের উপকারিতাইমাম মালিক (রহ.) বলেন : “সুন্নাতের দৃষ্টান্ত নূহের কিস্তির ন্যায়। যে কেউ তাতে আরোহণ করবে সে মুক্তি পাবে, আর যে তা প্রত্যাখ্যান করবে সে ডুবে যাবে”। (মাজমু’উল ফাতাওয়া, প্রনেতা ইবনে তাইমিয়া : ৪/৫৭)
এই মুক্তি জান্নাতের প্রবেশাধিকার এবং দোযখের অগ্নিকুণ্ড হতে পরিত্রাণ। খেদ ও আক্ষেপ একটি ভয়ংকর জিনিস। কিন্তু যে ব্যক্তি সুন্নাতের অনুসরণ করবে না কিয়ামতদিবসে তার খেদ ও দুঃখ হবে অত্যন্ত করুণ। আল্লাহ্ তাআলা বলেন : “অত্যাচারীসেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে: হায় আফসোস! আমি যদি রসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম”। [সূরা ফুরকান ২৫:২৭] আযাবের সময় এই দুঃখ ও খেদ অব্যাহত থাকবে : “যেদিন অগ্নিতে তাদের মুখমন্ডল ওলটপালট করা হবেসেদিন তারা বলবে: হায়!আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রসূলের আনুগত্য করতাম”। [সূরা আহ্যাব ৩৩:৬৬] অপরপক্ষে যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে তারা পূর্ণাঙ্গ প্রতিদান পাবে : “এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করে তিনি তাকে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন,যেগুলোর তলদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।এ হলোবিরাট সাফল্য”। [সূরা নিসা ৪:১৩] রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাকে আরও সুনিশ্চিত করে দিচ্ছেন : “যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে আমার অবাধ্য হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করবে”। [সহি বুখারি, ইংরেজি অনুবাদ ৯/৩৮৪]
সুন্নাতের মাধুর্য্য এই পৃথিবীতেও আস্বাদন করা যায়। নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথের পরিধি এতটাই প্রশস্ত যে, তা নিজ অনুগত লোকদেরকে শারীরিক, আধ্যাত্মিক ও মানসিকভাবে উপকৃত করে। এই সত্যিটা অমুসলিম বৈজ্ঞানিক দ্বারাও সাব্যস্ত হয়েছে। তাঁরা আবিষ্কার করেছেন যে, সুন্নাত আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সম্পূর্ণ সুসংহত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। ১৪০০ বছর পূর্বে নবি (স.)-এর ভাষায় যে বৈজ্ঞানিক ও মেডিকাল তথ্যগুলি অভিব্যক্ত হয়েছে তা বিজ্ঞানে সাম্প্রতিক কালে আবিষ্কৃত হয়েছে। এ থেকে সাব্যস্ত হয় যে, সুন্নাহ্ নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ হতে প্রত্যাদেশ। সুতরাং যে কেউ এই আইন অনুযায়ী জীবনযাপন করবে সে নিজে তো কল্যাণপ্রাপ্ত হবেই, উপরন্তু কল্যাণপ্রাপ্ত হবে এই ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীও। যে কেউ আল্লাহ্প্রণীত এই নিয়মগুলি মানতে রাজি হবে না সে এমন একটি সম্পদ হারাবে যা পৃথিবীর যেকোনো সম্পদ থেকে অসংখ্যবার উৎকৃষ্ট, যে সম্পদ মানুষকেও আন্তরিক আনন্দ দেয়।
আর যে কেউ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের আলোকে নিজের জীবন গড়ে তোলে সে সম্পূর্ণ পথনির্দেশিকা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “আমি তোমাদের সাথে দুটি জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সেদুটিকে সুদৃঢ় হস্তে আঁকড়ে ধরে থাকবে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। সেদুটি হলো আল্লাহ্র কিতাব এবং তাঁর রসূলের সুন্নাত”। [মুয়াত্তা মালিক : ১৬২৬ ও বায়হাকি : ২০৮৩৩] [৫]
তথ্যসূত্র[১] http://sunnahonline.com/library/fiqh-and-sunnah/127-suhayb-hasan [২] [৩] [৪] [৫] http://www.islaamnet.com/whatissunnah.html |
.