তাওহিদ


তাওহিদ একটি বিশেষ্য পদ যা وحَّدَ- يوحِّدُ(ওয়াহহাদা/ইয়ুওয়াহ্‌হিদু) ক্রিয়া পদ হতে উদ্ভূত। এর অর্থ : কোনো কিছুকে এক করা, স্বতন্ত্র করা। এটা অস্বীকৃতি ও স্বীকৃতি উভয়ই একত্রিত না হলে পূর্ণতা লাভ করে না, অর্থাৎ যে জিনিসটি একদম স্বতন্ত্র তার সঙ্গে এই একত্বের বৈশিষ্ট্যটি স্বীকার করে অন্য সবকিছু থেকে ওই বৈশিষ্ট্যটিকে অস্বীকার করা। [১]

 

বিষয়সূচি

 

আভিধানিক অর্থ

আক্ষরিক অর্থে : তাওহিদ শব্দটি ওয়াহাদা শব্দ থেকে গৃহীত, যার অর্থ কোনো কিছুকে ওয়াহিদ (একবচন) করা। ওয়াহিদ দুই, তিন প্রভৃতি বহুবচনের বিপরীত। সুতরাং ওয়াহিদ এমন কিছু যা সর্বদা স্বতন্ত্র থাকবে এবং কখনও কোনো কিছুর অংশীদার হবে না।

 

ইসলামি পরিভাষা

ইসলামি পরিভাষায় তাওহিদের সংজ্ঞা : তাওহিদ বলতে আল্লাহ্‌ তাআলাকে যাবতীয় ইবাদতের একমাত্র উপযুক্ত সত্তা বলে স্বীকার করাকে বোঝায়, ফলে তোমরা তোমাদের যাবতীয় ইবাদত শুধুমাত্র অদ্বিতীয় আল্লাহ্‌র জন্য করবে।

 

আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন : “আর দ্বিন সম্পূর্ণ আল্লাহ্‌র জন্য"” [সূরা আনফাল ৮:৩৯] উক্ত আয়াতে দ্বিন শব্দের অর্থ ইবাদত, যেমন আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন : “আমি জিন ও মানবজাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি”। [সূরা যারিয়াত ৫১:৫৬] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন : “আর আল্লাহ্‌র ইবাদত করো এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে অংশী করো না”। [সূরা নিসা ৪:৩৬] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন : “তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদতে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকে ডাকো যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে”। [সূরা গাফির ৪০:১৪]

 

তাওহিদের অর্থ হলো : আল্লাহ্‌ তাআলাকে অদ্বিতীয় বলে স্বীকার করে যাবতীয় ইবাদতে তাঁর জন্যই করা এবং অন্য সবকিছুর ইবাদত বর্জন করা। [২]

 

তাওহিদের শ্রেণিবিভাগ

তাওহিদের যতগুলো বিভাগ আল্লাহ্‌ তাআলার সঙ্গে সংসৃষ্ট, সবগুলোই তাওহিদের সাধারণ সংজ্ঞার অন্তর্গত; অর্থাৎ “যে সমস্ত জিনিসের অধিকারী ও উপযুক্ত কেবল আল্লাহ্‌ তাআলা সেগুলোকে স্বতন্ত্রভাবে শুধুমাত্র তাঁর সঙ্গেই বিশিষ্ট রাখার নাম তাওহিদ”।

 

বিদ্বানগণ তাওহিদের তিনটি বিভাগ উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো :

১। তাওহিদে রবুবিয়্যাহ্‌ (আল্লাহ্‌ তাআলার প্রভুত্বের তাওহিদ)

২। তাওহিদে আস্‌মা ওয়াস সিফাত (আল্লাহ্‌ তাআলার নাম ও গুণাবলির তাওহিদ)

৩। তাওহিদে উলুহিয়্যাহ্‌ (যাবতীয় ইবাদতে আল্লাহ্‌ তাআলার অধিকারের তাওহিদ)

 

উলামাগণ কুরআনের আয়াত এবং হাদিস নিয়ে গবেষণা ও নীরিক্ষা করে এই শ্রেণিবিভাগ জানতে পারেন। তাঁরা দেখেছেন যে, তাওহিদ যে ধরনেরই হোক না কেন তা এই তিনটি বিভাগের মধ্যে যেকোনো একটির অন্তর্গত আছেই।

 

১। তাওহিদে রবুবিয়্যাহ্‌

তাওহিদে রবুবিয়্যাহ্‌ হলো : সবকিছুর সৃষ্টি, আধিপত্য এবং নিয়ন্ত্রণে আল্লাহ্‌ তাআলাকে এক ও অদ্বিতীয় বলে স্বীকার করা। এই অর্থের বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ :

প্রথম : সৃষ্টিকার্যে আল্লাহ্‌ তাআলাকে এক ও অদ্বিতীয় বলে স্বীকার করা। তিনিই একমাত্র স্রষ্টা, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো স্রষ্টা নেই। আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন : “তিনি ব্যতীত অন্য কোনো স্রষ্টা আছে কি, যে আকাশ ও পৃথিবী থেকে তোমাদেরকে জীবিকা দান করে ? তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। সুতরাং তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ ?” [সূরা ফাত্বির ৩৫:৩]

 

তাই শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ তাআলাই একমাত্র স্রষ্টা। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং অস্তিত্বের পূর্ব থেকেই তিনি সবকিছু নির্ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহ্‌ তাআলা নিজে যা কিছু বানিয়েছেন তা তথা সৃষ্টির সমস্ত কার্যকলাপ, সবকিছুই তাঁর সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত। এটাই কারণ, ভাগ্যের প্রতি ঈমানের পূর্ণাঙ্গতার একটি অঙ্গ হলো এই বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ্‌ তাআলাই বান্দাদের কার্যকলাপের স্রষ্টা। যেমন তিনি বলেন : “প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্‌ই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কিছু করো তাও”। [সূরা সা-ফফাত ৩৭:৯৬]

 

২। তাওহিদে আস্‌মা ওয়াস সিফাত (আল্লাহ্‌ তাআলার নাম ও গুণাবলির তাওহিদ)

তাওহিদে আস্‌মা ওয়াস সিফাত হলো : স্বয়ং আল্লাহ্‌ তাআলা যে সমস্ত নামে নিজেকে নামাঙ্কিত করেছেন অথবা তাঁর গ্রন্থে বিবৃত করেছেন অথবা তাঁর নবি (সঃ)-এর ভাষায় বর্ণনা করেছেন সেগুলোর সাথে কেবল তিনিই বিশিষ্ট এ কথা বিশ্বাস করা ও স্বীকার করা। সেই স্বীকারোক্তি হতে হবে স্বচ্ছ ও অবিকৃত। সেগুলোর মধ্যে কোনোরূপ বিকৃতি ঘটানো যাবে না; সেগুলোকে কিংবা সেগুলোর অর্থকে অস্বীকার করা যাবে না; এই বিশ্বাস করা যাবে না যে, সেগুলো সৃষ্টির সদৃশ; প্রশ্ন করা যাবে না সেগুলো কীরূপ। এ বিশ্বাস করা অপরিহার্য যে, আল্লাহ্‌ তাআলা নিজের যে সমস্ত নাম ও গুণাবলি বর্ণনা করেছেন সবগুলোই সত্য ও বাস্তব। তবে আমরা সেগুলোর গভীরে অনুপ্রবেশ করি না। আমরা প্রশ্ন করি না সেগুলো কেমন। আমরা বিশ্বাস করি না যে, সৃষ্টির নাম ও গুণাবলির সঙ্গে সেগুলোর কোনো সাদৃশ্য আছে।   

 

তাওহিদের এই বিভাগটিতে এই উম্মতের বহু দল পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। তারাও সেই একই দিকে মুখ করে স্বালাত আদায় করে যেদিকে আমরা করি এবং নিজেদেরকে ইসলামের মধ্যে দীক্ষিত বলে দাবি করে।

 

যাঁরা ঈমান, আমল এবং বিধিনিয়মে ইসলামের যথার্থ অনুসরণ করেছেন সেই সালাফ বা সত্যনিষ্ঠ মুসলিম পূর্বপুরুষগণ এই শ্রেণির তাওহিদে যে মতপথ অবলম্বন করেছিলেন তা হলো : তাঁরা আল্লাহ্‌ তাআলাকে ওই সমস্ত নামেই নামাঙ্কিত ও অভিব্যক্ত করতেন যেগুলো তিনি স্বয়ং নিজের জন্য বর্ণনা করেছেন। তাঁরা স্বীকার করেন ও বিশ্বাস করেন যে, এ নাম ও গুণাবলি সত্য ও বাস্তব। তাঁরা এই নামগুলির অর্থকে বিকৃত করেন না, ওগুলোকে অস্বীকার করেন না, ওগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাও করেন না এবং এই বিশ্বাস করেন না যে, ওগুলো সৃষ্টির নাম ও গুণাবলি সদৃশ।

 

উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ্‌ তাআলা নিজেকে আল-হাইয়ু (চিরঞ্জীব) ও আল-ক্বাইয়ুম (সর্বনিয়ন্তা) নামে অভিহিত করেছেন। সুতরাং আমাদের জন্য এই বিশ্বাস করা বাধ্যতামূলক যে, আল-হাইয়ু আল্লাহ্‌ তাআলার একটি নাম। আমাদের এও বিশ্বাস করতে হবে যে, এই নাম হতে যে বৈশিষ্ট অভিব্যক্ত হচ্ছে তা পূর্ণাঙ্গ, চিরস্থায়ী, অনাদী ও অনন্ত। আল্লাহ্‌ তাআলা নিজেকে আস-সামী’ (সর্বশ্রোতা) নামেও অভিহিত করেছেন। তাই পূর্বানুরূপ আমাদের জন্য এই বিশ্বাস করা অপরিহার্য যে, এটাও আল্লাহ্‌ তাআলার একটি নাম এবং সর্বদা সর্বত্র সবকিছু শোনার গুণ তাঁর মধ্যে বিদ্যমান। তিনি শ্রবণকার্যের সঙ্গে নিজেকে বিশিষ্ট করেছেন যা এই নাম ও এর বিশেষণ হতে সাব্যস্ত হয়। তাই “সর্বশ্রোতা” কারো নাম হবে অথচ বাস্তবে শ্রবণের গুণ তার মধ্যে থাকবে না এবং শব্দ ও ধ্বনি শোনার কার্যের সঙ্গে সে বিশিষ্ট হবে না, এমন বৈপরিত্ব অসম্ভব।  

 

আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন : “আর ইহুদিরা বলে, “আল্লাহ্‌র হাত বন্ধ হয়ে গেছে (তিনি কৃপণ)”; তাদেরই হাত বন্ধ হয়ে গেছে এবং তাদের উক্তির দরুণ তাদের প্রতি অভিশাপ করা হয়েছে। বরং তাঁর তো দুটি হাতই উম্মুক্ত। তিনি যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেন”। [সূরা মায়িদা ৫:৬৪]

 

আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন : “তাঁর উভয় হাতই উম্মুক্ত”। এখানে তিনি নিজের দুটি হাতের কথা ঘোষণা করেছেন, সাথে এও বলে দিয়েছেন যে, হাত দুটি যথেষ্ট উম্মুক্ত যাদ্বারা তিনি সৃষ্টিকে মহানুভবতার সঙ্গে দান করেন। সুতরাং এখান থেকে আমাদের জন্য বিশ্বাস করা অপরিহার্য হয়ে যায় যে, বাস্তবে আল্লাহ্‌ তাআলার দুটি হাত আছে। নেয়ামত প্রদানের ক্ষেত্রে তাঁর হাত দুটি ব্যাপক উদার ও উম্মুক্ত। তবে এটাও আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক যে, ওগুলো কী ধরনের আমাদের মস্তিষ্ক কর্তৃক তা কল্পনা করার চেষ্টাও আমরা করব না এবং ভাষায় ওগুলো প্রকাশ করব না, বাস্তবে ওগুলোর আকার কী সেই প্রশ্ন করব না, কোনো সৃষ্টির হাতের সাথে ওগুলোর সাদৃশ্য বর্ণনা করব না। কেননা আল্লাহ্‌ তাআল বলছেন : “তাঁর সদৃশ কিছু নেই, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা শুআরা ৪২:১১]

 

তিনি আরও বলেন : “বলে দাও, আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপকার্য, অসংগত, অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি এবং আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শরীক করা যার পক্ষে আল্লাহ্‌ কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহ্‌ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে সম্বন্ধে তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই (ইত্যাদি বিষয়) নিষিদ্ধ করেছেন”। [সূরা আ’রাফ ৭:৩৩]

 

তিনি আরও বলেন : “যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সে বিষয়ের অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই :কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়-ওদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসিত হবে”। [সূরা ইসরা ১৭:৩৬]

 

৩। তাওহিদে উলুহিয়্যাহ্‌

তাওহিদে উলুহিয়্যাহ্‌ হলো শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ তাআলাকে যাবতীয় ইবাদতের উপযুক্ত বলে স্বীকার করার নাম। আল্লাহ্‌ তাআলার সঙ্গে কাউকে অংশী করা, তাদের উপাসনা করা অথবা আল্লাহ্‌র নিকট তারা শুপারিশ করবে এই বলে তাদের সান্নিধ্য অন্বেষণ করা মানুষের জন্য বৈধ নয়। তাওহিদের এই বিভাগেই বহুদেববাদীরা পথভ্রষ্ট হয়েছে। এজন্যই বহুদেববাদীদের সঙ্গে রসূলুল্লাহহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম লড়াই করেছেন, তাদের রক্ত ও ধনসম্পদ, ঘরবাড়ির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। এটা তাওহিদের ওই বিভাগ যা নিয়ে নবিগণ প্রেরিত হয়েছিলেন। অন্য দুই শ্রেণির তাওহিদের সাথে বিশেষ করে এটার জন্যই কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে। যে বিষয়টির প্রতি নবিগণ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেছিলেন তা ছিল তাওহিদের এই বিভাগটি – তাওহিদে উলুহিয়্যাহ্‌।

 

তাওহিদে উলুহিয়্যাহ্‌র অর্থ : মানুষ আল্লাহ্‌ তাআলা ব্যতীত অন্য কারো কোনো প্রকার উপাসনা করবে না; আল্লাহ্‌র নিকটস্থ কোনো ফেরেশ্তারও না, তাঁর প্রেরিত কোনো নবিরও না, কোনো ধর্মনিষ্ঠ বান্দারও না, অন্য কোনো সৃষ্টির না। ইবাদতে আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর কারো অধিকার নেই। যে কেউ এই তাওহিদকে প্রত্যাখ্যান করবে, এর চাহিদা পূরণ করবে না সে একজন বহুদেববাদী, একজন অবিশ্বাসী যদিও সে তাওহিদে রবুবিয়্যাহ্‌ ও তাওহিদে আসমা ওয়াস সিফাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে। যদি কোনো ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্‌ তাআলাই একমাত্র স্রষ্টা, অধিপতি, সর্বনিয়ন্তা এবং তাঁর সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলি রয়েছে অতঃপর সে আল্লাহ্‌ তাআলার সঙ্গে অন্য বাতিল উপাস্যদেরও উপাসনা করে তাহলে অন্য দুই শ্রেণি তাওহিদের প্রতি তার ঈমান তার কোনো উপকারে আসবে না। তাই যদি কোনো ব্যক্তি তাওহিদে রবুবিয়্যাহ্‌ এবং তাওহিদে আস্‌মা ওয়াস সিফাতের প্রতি পূর্ণাঙ্গ ঈমান রাখার পর কোনো মৃতের কবরে যায়, তার ইবাদত করে, তার জন্য ব্রত করে এবং তার নৈকট্য কামনা করে তবে এমন লোক একজন বহুদেববাদী, অবিশ্বাসী এবং তার চিরস্থায়ী আবাসস্থল জাহান্নাম। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন : “যে কেউ আল্লাহ্‌ তাআলার সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করে আল্লাহ্‌ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং অত্যাচারীর জন্য কোনো সাহায্যকারী হবে না”। [সূরা মায়িদা ৫:৭২] [৩]

 

তাওহিদের গুরুত্ব

১। এটি সেই স্তম্ভ যার উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত। রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত : আল্লাহ্‌র একত্ববাদ ………… (মুসলিম : ১৯]   

 

২। এটাই ছিল সমস্ত নবি ও রসূলের দাওয়াতের মূল কুঞ্জিকা।“আর নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে একজন করে রসূল প্রেরণ করেছি (এই বাণী দিয়ে যে,) তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র ইবাদত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো”। [সূরা নাহ্‌ল ১৬:৩৬]

 

৩। কারণ আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদেতকে তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। “আমি মানব ও জিন জাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি”। তবে আমরা তাঁর কীভবে ইবাদত করতে পারি যদি আমরা এটাই জানতে না পারি যে, তিনি কে ? যদি আমরা আল্লাহ্‌ তাআলার নাম ও গুণাবলিকে যথাযথ বুঝতে পারি তবেই আমরা তাঁর সঠিক পরিচিতি পাব।

 

৪। কুরআনে এর প্রতিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাওহিদ দিয়েই কুরআন আরম্ভ হয়েছে এবং তাওহিদ দিয়েই শেষ হয়েছে। কুরআনের অধিকাংশ আয়াতেই তাওহিদের কথা আছে।

 

৫। রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তাঁর দিবস তাওহিদ আরম্ভ করতেন। তিনি (সঃ) ফজরের স্বালাতে সূরা কাফিরুন ও সূরা ইখলাস পাঠ করতেন, অনুরূপ বিত্‌রের স্বালাতে ওই সুরা দুটি পাঠ করতেন। (মুসলিম) এভাবে তিনি তাওহিদের স্বীকারোক্তির মাধ্যেম দিনের সূচনা এবং সমাপ্ত করতেন।  

 

৬। রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তাঁর মরণরোগেও এর আলোচনা করেছিলেন (যা এর গুরুত্ব আরও স্পষ্ট করে)। তিনি বলেছিলেন : “ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের প্রতি আল্লাহ্‌র অভিসম্পাত হোক, তারা স্বীয় নবিদের কবরকে উপাসনালয় বানিয়ে নিয়েছিল”। (বুখারি)

 

৭। এটাই প্রথম জিনিস যার প্রতি রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মানুষকে আহ্বান করেছিলেন এবং ২৩ বছর ধরে এর প্রতিই মানুষকে আহ্বান করতে থাকেন।

 

৮। যখন তিনি তাঁর সাহাবাবর্গকে বিভিন্ন জাতির নিকট প্রেরণ করতেন তখন তাঁদেরকে তাওহিদের বাণী প্রচার করার নির্দেশ দিতেন। তিনি মুআয ইবনে জাবালকে ইয়ামানে পাঠানোর সময় বলেছিলেন : “তুমি একটি আহ্‌লে কিতাব সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ। সুতরাং সর্বপ্রথম যে বিষয়টির দিকে তুমি তাদেরকে আহ্বান করবে তা হবে আল্লাহ্‌র একত্ববাদ (তাওহিদ)”। (বুখারি ৬/৪৬৯)

 

৯। যদি কেউ তাওহিদের উপর মৃত্যুবরণ করে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যখন এক ইহুদি বালক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তখন তাঁকে রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন : “যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র সেই আল্লাহ্‌র যিনি এই বালকটিকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করলেন”। অথচ এই লোকটি কোনো সৎকর্ম করেননি। (বুখারি) [৪]  

 

তাওহিদের সুফল

তাওহিদের ন্যায় অন্য কোনো কিছুতে এমন শুভ পরিণতি এবং এত বৈচিত্রময় সুফল নেই। কারণ তাওহিদই হলো এই পার্থিব জগতে তথা পরকালে সর্বোত্তম জিনিস।
পাপের ক্ষমা তাওহিদের পরিণতি ও সুফলের অন্তর্ভুক্ত।

 

ইহকাল তথা পরকালের দুঃখ-দুর্দশা দূরীকরণ এবং উভয় জগতের শাস্তি মকুব করার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো এই তাওহিদ।

 

তাওহিদ মানুষকে সঠিক পথনির্দেশনা দেয় এবং ইহকাল তথা পরকালের পূর্ণ নিরাপত্তা দান করে।

 

আল্লাহ্‌ তাআলার সন্তুষ্টি ও পুরস্কার-প্রাপ্তির একমাত্র উপায় তাওহিদ। সবচেয়ে সৌভাগ্যবান লোক  তারা যারা আল্লাহ্‌র রসূল সাল্লাল্লাহু আআলয়হি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ প্রাপ্ত হবে এবং পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে ও বিশুদ্ধ মনে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ পড়বে।

 

একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো যে, সর্বপ্রকার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ কর্ম ও কথার গ্রহণযোগ্যতা তাওহিদের উপর নির্ভরশীল।

 

যখন তাওহিদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হৃদয়ে পূর্ণ থাকে তখন সে আল্লাহ্‌ তাআলার প্রিয়পাত্র হয়ে যায় এবং তার হৃদয় ঈমানে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। সে তখন কুফ্‌র, পাপাচারিতা ও গোনাহ্‌কে ঘৃণা করে এবং তাকে সুপথপ্রাপ্ত লোকদের স্তরে পৌঁছে দেয়।

 

উপাসকের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করে এই তাওহিদ। যদি উপাসকের তাওহিদ ও ঈমান পূর্ণাঙ্গ হয় তাহলে দুঃখ-দুর্দশার সময়ও তার মন ও মানসিকতা বিচলিত হয় না। তার আত্মা পরিতুষ্ট ও পরিতৃপ্ত থাকে। আল্লাহ্‌ তাআলা তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তার সামনে আত্মসমর্পণ করে এবং অকুষ্ঠচিত্তে মেনে নেয়।

 

এর একটি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো যে, উপাসক বান্দা সৃষ্ট বস্তুর উপাসনা হতে মুক্তি পায়। সৃষ্ট বস্তুর উপর নির্ভরশীলতা, তাদের ভীতি, তাদের প্রতি প্রত্যাশা এবং তাদের নিমিত্ত সৎকর্ম সম্পাদন প্রভৃতি হতে সে মুক্তি পায়। ফলে সে প্রকৃত সম্মান ও শ্রদ্ধা জয় করতে পারে।

 

তাওহিদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো : আল্লাহ্‌ তাআলা তাওহিদবাদীদেরকে দান করেন বিজয়, সম্মান, শ্রদ্ধা এবং পার্থিব জীবনে সাহায্য। তিনি তাদেরকেন দান করেন পথনির্দেশিকা। তাদের জন্য সহজতর করে দেন বহু বিষয়। তাদের কার্যক্রমকে করে দেন নিরঙ্কুশ এবং তাদের কথা ও কর্মকে করে দেন বলিষ্ঠ।

 

তাওহিদবাদী এবং মু’মিন লোকদেরকে আল্লাহ্‌ তাআলা ইহকাল ও পরকালের অনিষ্ট হতে রক্ষা করেন এবং তিনি তাদেরকে দান করেন একটি ভালো ও প্রশান্ত জীবন। এর সাক্ষ্যবাণী সুবিদিত এবং কিতাব ও সুন্নাতে এর আলোচনা প্রায় পরিলক্ষিত হয়। [৫]

 

তাওহিদের ভাবার্থ

  • সৃষ্টির লক্ষ
  • নবিদের প্রেরণ করার কারণ
  • গ্রন্থাদি অবতীর্ণের কারণ
  • মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য
  • শান্তি ও সন্তোষের উপায়
  • সর্বপ্রথম যে বিষয়ের প্রতি আহ্বানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে
  • আমাদের উপর আল্লাহ্‌র অধিকার
  • জান্নাতে প্রবেশের উপায়
  • যাবতীয় পাপের মার্জনা এবং জাহান্নামের অগ্নি হতে নিষ্কৃতি
  • এর বিপরীত, অর্থাৎ শির্‌কের ভয়াবহতা

 

সৃষ্টির লক্ষ

 “আমি মানব ও জিন জাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি”। [সূরা যারিয়াত ৫১:৫৬] আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে কুরআনেরসবচেয়ে স্পষ্ট আয়াত এটিই।
 

নবিদের প্রেরণ করার কারণ

 “আমি তোমার পূর্বে কোনো রসূলই প্রেরণ করেনি এই প্রত্যাদেশ ব্যতীত : আমি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত করো”। [সূরা আন্বিয়া ২১:২৫]

 

“আর নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে একজন করে রসূল প্রেরণ করেছি (এই বাণী দিয়ে যে,) তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র ইবাদত করো এবং তাগুতকে (সমস্ত বাতিল উপাস্যদেরকে) বর্জন করো (অর্থাৎ আল্লাহ্‌র স্থলে তাগুতের উপাসনা করো না)। অতঃপর তাদের কতককে আল্লাহ্‌ তাআলা সৎপথে পরিচালিত করেছেন এবং কতকের উপর পথভ্রষ্টতা সাব্যস্ত হয়েছিল, সুতরাং পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো যারা সত্যকে অস্বীকার করেছে তাদের পরিণাম কী হয়েছে”। [সূরা নাহ্‌ল ১৬:৩৬]

 

গ্রন্থাদি অবতীর্ণের কারণ

 “তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাঁর প্রতি ইচ্ছা নির্দেশ সম্বলিত অহি দিয়ে ফেরেশ্তাদেরকে প্রেরণ করেন এই মর্মে সতর্ক করবার জন্য যে, আমি (আল্লাহ্‌) ছাড়া কোনো মা'বুদ নেই, সুতরাং তোমরা আমাকে ভয় করো”। [সূরা নাহ্‌ল ১৬:২]

 

প্রত্যেক নবি ও রসূল অহি পেয়েছেন যা ছিল ঐশী গ্রন্থের ভিত্তি। কখনও কখনও তা লিখে নেয়া হত আর অনেক সময় তা লিখা হত না। এটা ছিল তাদের গৃহীত অনুপ্রেরণা। অনেক গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল, তবে বিখ্যাত চারটি গ্রন্থের সঙ্গে আমরা সুপরিচিত।

 

মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য

 “তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তবে তোমাদের মধ্যে কতিপয় কাফির আর কতিপয় মু’মিন এবং তোমাদের যাবতীয় কৃতকর্মের দ্রষ্টা”। [সূরা তাগাবুন ৬৪:২]

 

তাওহিদের অনুসরণ ইহলৌকিক ও পরলৌকিক জীবনে সুখ-সমৃদ্ধির উপায়

 “ওরা তারা যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহ্‌র স্মরণে যাদের হৃদয় প্রশান্ত থাকে, জেনে রেখো নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র স্মরণে অন্তর প্রশান্ত থাকে”। [সূরা রা’দ ১৩:২৮]

 

সর্বপ্রথম যে বিষয়টির প্রতি আমাদেরকে আহ্বান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে

 “হে মানবকুল ! তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদত করো যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা মুত্তাক্বি হতে পারো”। [সূরা বাকারা ২:২১]

 

এটাই ছিল কুরআনের প্রথম নির্দেশ।

 

মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ করার সময় বলেছিলেন : “তুমি তাদের সর্বপ্রথম এই সাক্ষ্যবাণীর প্রতি আহ্বান করবে যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত উপাস্য হওয়ার অধিকার অন্য কারো নেই”। অন্য বর্ণনায় এসেছে : “… তোমরা কেবল আল্লাহ্‌ তাআলার ইবাদত করো”। (বুখারি ও মুসলিম]

 

আমাদের উপর আল্লাহ্‌র অধিকার

রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বললেন : “হে মুআয ! তুমি কি জানো স্বীয় বান্দাদের উপর আল্লাহ্‌ তাআলার অধিকার কী ?” আমি বললাম : “আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রসূলই বেশি জানেন”। রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বললেন : “শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ তাআলার ইবাদত করা এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। তুমি কি জানো তাঁর (আল্লাহ্‌র) উপর তাদের অধিকার কী ?” আমি বললাম : “আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রসূলই বেশি জানেন”।  রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বললেন : “তাদেরকে শাস্তি না দেয়া”। (বুখারি, নবম খণ্ড, অধ্যায় : ৯৩, হাঃ ৪৭০)

 

জান্নাতে প্রবেশের উপায়

 “… আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌ তাআলাই একমাত্র উপাসনার উপযুক্ত এবং আমি তাঁর প্রেরিত রসূল। যে ব্যক্তিই এ দুটি নিয়ে তাতে কোনো সংশয় পোষণ না করে আল্লাহ্‌র সাথে সাক্ষাত করবে সে নিশ্চিত জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (মুসলিম, শার্‌হুন নবাবি : ১/২২৪)

 

যাবতীয় পাপের মার্জনা এবং জাহান্নামের অগ্নি হতে নিষ্কৃতি

জনৈক ব্যক্তি কখনো কোনো সৎকর্ম করেনি। সে বলেছিল : তার মৃত্যুর পর তার পরিবার যেন তাকে দাহ করে এবং তার দাহিত শরীরের অর্ধেক ছাই ভূপৃষ্ঠে ছিটিয়ে দেয় এবং অর্ধেক ছাই সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়। কেননা, আল্লাহ্‌র শপথ, যদি আল্লাহ্‌ তাকে ধরে নেন তাহলে তিনি তাকে এমন শাস্তি দেবেন যা তিনি অন্য কোনো মানুষকে দেননি। কিন্তু আল্লাহ্‌ তাআলা সমুদ্রকে (তার  দাহিত শরীদের ছাই) জড়ো করার নির্দেশ দেন এবং একই নির্দেশ দেন ভূপৃষ্ঠকে। অতঃপর আল্লাহ্‌ (পুনঃসৃষ্ট বক্তিটিকে) জিজ্ঞাসা করলেন : “তুমি এরূপ কেন করেছিলে ?” লোকটি উত্তর দিল : “আপনার ভয়ে, যেমন আপনি জানেন”। এ কথা শুনে আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। (বুখারি, নবম খণ্ড, অধ্যায় : ৯৩, হাঃ ৫৯৭)

 

শিরকের ভয়াবহতা

 “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না যে তাঁর সাথে অংশী স্থাপন করে এবং তদ্ব্যতীত যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সঙ্গে অংশী স্থাপন করে অবশ্যই সে মহাপাপ করে”। [সূরা নিসা ৪:৪৮] [৬]

 

তাওহিদ কেন বোধগম্য

  • অনুমান
  • অদ্বিতীয়তা
  • কুরআনি যুক্তি  

 

অমুসলিরা আমাকে অনেক সাধারণ প্রশ্ন করে থাকে। তন্মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো : “যদি ইশ্বরের অস্তিত্ব থাকে তাহলে আমাদের কেন বিশ্বাস করতে হবে যে, তিনি এক, অদ্বিতীয় ?” প্রশ্নটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এটাই স্পষ্ট করে দেয় ইসলামি তত্ত্বজ্ঞানের মৌলিক ধারণা তথা একত্ববাদের ধারণাকে। আল্লাহ্‌র একত্ববাদ বা তাওহিদ হলো কুরআনের মূল আলোচনা এবং সমস্ত নবির মূল বাণী। কুরআনের ১১২নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তাআলার প্রকৃতি ও তাঁর একত্ববাদের কথা খুব অলংকারপূর্ণ ভাষায় বিবৃত হয়েছে।

 

বলো : সেই আল্লাহ্‌ এক, অদ্বিতীয়। আল্লাহ্‌ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো দ্বারা জন্মলাভ করেননি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই”।

 

এই সূরার আলোকে আল্লাহ্‌র একত্ববাদ ও অদ্বিতীয়তা সম্বন্ধে প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন দেয়া যায়। আল্লাহর একত্ববাদের একটি ইতিবাচক অবস্থা এতে অভিব্যক্ত হয়। তারা ধর্মীয় থেকে দার্শনিক আলোচনার দিকে যায়।

  • অনুমান
  • অদ্বিতীয়তা
  • কুরআনি যুক্তি  

 

অনুমান

যুক্তি বলছে এক অসীম স্রষ্টার সত্তা এক আর শুধু এক। অন্য কোনো অসীম সত্তা থাকতে পারে না, কারণ তা অযৌক্তিক। তাঁকে অদ্বিতীয় হতে হবে, কেননা কেবল সীমাবদ্ধ জিনিসই একাধিক হতে পারে। অনুরূপ তাঁর কোনো পতি-পত্নী বা সন্তান থাকতে পারে না এবং তাঁর কোনো লিঙ্গও থাকতে পারে না। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিত্বে বিভক্ত হতে পারেন না, কারণ শুধু সীমাবদ্ধ জিনিসই বিভাজ্য হতে পারে। একই ভাবে তিনি বিভিন্ন ভূকিকায় বিভক্ত হতে পারেন না, কারণ বিভাজন মানেই তার সীমা আছে যা অসীমত্বের পরিপন্থী।

 

অদ্বিতীয়তা

বিশ্বের স্রষ্টাকে অদ্বিতীয় হতেই হবে। কুরআন বলছে : “তাঁর সদৃশ কিছু নেই”। যদি বিশ্বের স্রষ্টা অদ্বিতীয় না হয় তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে যে, বিশ্বের স্রষ্টা এবং বিশ্বের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য বিদ্যমান।

 

কুরআনি যুক্তি

উপাস্য এক, এই বিবৃতি কুরআন দিয়েছে। নিম্নোক্ত আয়াতটি প্রণিধান করুন : “যদি আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবীতে আল্লাহ্‌ ব্যতীত বহু মা'বুদ হত তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত”। কুরআন স্পষ্ট ভাষায় বলছে যে, যদি একাধিক স্রষ্টা মিলে এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করত তাহলে তা বিশৃঙ্খলার মধ্যে থাকত এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে বিন্যাস আমরা দেখছি তা খুঁজে পাওয়া যেত না। [৭]

 

তাওহিদের উৎকর্ষ

১। আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন :

 “যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে অন্যায়ের সাথে (শির্‌কের সাথে) সংমিশ্রিত করেনি প্রকৃতপক্ষে তারাই শান্তি ও নিরাপত্তার অধিকারী এবং তারাই সুপথপ্রাপ্ত”। [সূরা আন্‌আ’ম ৬:৮২]

 

আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলছেন : যখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন কতিপয় মুসলমান দুঃচিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা বলেন : আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে স্বীয় আত্মার উপর যুলুম করে না ? রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন : “এটা নয়; এর অর্থ শির্‌ক। তোমরা কি শুনোনি লুকমান (আঃ) তাঁর সন্তানকে কী বলেছিলেন :

 “হে বৎস ! আল্লাহ্‌র সঙ্গে কাউকে শরিক করো না, নিশ্চয়ই শির্‌ক মহা অন্যায়”। [কুরআন ৩১:১৩] (বুখারি ও মুসলিম)

 

এই আয়াতটি ওই সমস্ত মু’মিনকে সুসংবাদ দিচ্ছে যারা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ তাআলার ইবাদত করে এবং নিজেদের ঈমানকে শির্‌কের সাথে সংমিশ্রিত করে না। বরং যারা তা থেকে দূরত্ব অবলম্বন করে তারা পরকালে আল্লাহ্‌ তাআলার শাস্তি হতে নিরাপত্তার মধ্যে থাকবে এবং পৃথিবীতে সুপথপ্রাপ্ত হবে।  

 

২। রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলছেন : “ঈমানের ষাটের কিছু বেশি শাখা আছে। সর্বোচ্চ শাখা হলো : “আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই’ বলা এবং সর্বনিম্ন শাখা হলো : পথ হতে অনিষ্টকর জিনিস সরিয়ে ফেলা”। (মুসলিম)

 

রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন : “কোনো বিষয়ে আল্লাহ্‌ তাআলার সঙ্গে কাউকে শরিক করেনি, এমন যে কেউ আল্লাহ্‌র সাথে সাক্ষাত করবে সে জন্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে কেউ তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করার পর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”। (মুসলিম)

 

এই সমস্ত বর্ণনা হতে তাওহিদের উৎকর্ষ অভিব্যক্ত হয়ে যায়। কারণ তাওহিদ এমনই জিনিস যার দ্বারা বান্দা প্রসন্নতা অর্জন করতে পারে। পাপ ও ভুল-ত্রুটির কাফফারা এবং মার্জনার সর্বোত্তম মাধ্যম এই তাওহিদ।  

 

তাওহিদের ইতিহাস

  • নবি ও রসূলদের তাওহিদ
  • পথভ্রষ্টতার সূচনা

 

নবি ও রসূলদের তাওহিদ

প্রথম রসূল নূহ থেকে শুরু করে সর্বশেষ রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সমস্ত নবি ও রসূল তাওহিদের প্রতি মানুষকে আহ্বান করেছেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন :

 “আমি তোমার পূর্বে কোনো রসূলই প্রেরণ করেনি এই প্রত্যাদেশ ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত করো”। [সূরা আন্বিয়া ২১:২৫]

 

আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলছেন :

 “আর নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে একজন করে রসূল প্রেরণ করেছি (এই বাণী দিয়ে যে,) তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র ইবাদত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো”। [সূরা নাহ্‌ল ১৬:৩৬]

 

আল্লাহ্‌ তাআলা মানুষকে শুধুমাত্র তাওহিদে রবুবিয়্যাহ্‌র দিকে আহ্বান করার জন্য নবিগণকে প্রেরণ করেছিলেন, এমন হতে পারে না; বরং তাওহিদে উলুহিয়্যাহ্‌র প্রতিও মানুষকে আহ্বান করার জন্যব তাঁদেরকে প্রেরণ করেছিলেন। যারা তাওহিদে রবুবিয়্যাহ্‌কে অস্বীকার করেছিল তাদের সংখ্যা খুব কম ছিল। যারা অস্বীকার করেছিল তাদের অস্বীকৃতি তাদের অন্তঃকরণ হতে ছিল না। তাছাড়া তাদের বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ এ কথা ভালোভাবেই জানত, কিন্তু তারা অহংকারবশত তা অস্বীকার করেছিল।

 

পথভ্রষ্টতার সূচনা

মৃত ধার্মিক মুসলমানদের শ্রদ্ধা ও প্রশংসায় অতিরঞ্জন হতেই শির্‌কের সূত্রপাত ঘটে। মানুষ তাদেরকে অতিরিক্ত ভালোবাসত। তাই তারা তাদেরকে মূর্তির আকার দিয়ে আল্লাহ্‌ তাআলার সাথে সাথে তাদেরও পূজা করত এবং তাদের নিকট প্রার্থনা করত। সুতরাং মানুষ কেন ভাবল যে, তাদেরকে আল্লাহ্‌ তাআলার ইবাদতের সাথে সাথে এই সমস্ত ধর্মনিষ্ঠ লোকদের পূজা করতে হবে ? এ কথা বোঝার প্রয়োজন আছে।

 

[১] মানুষের স্বভাবধর্ম

আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন :

 “আমি জিন ও মানবকে শুধু এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা কেবল আমারই ইবাদত করবে। আমি তাদের নিকট কোনো জীবনোপায় কামনা করি না, এও চাই না যে, তারা আমার আহার যোগাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ জীবিকা প্রদানকারী এবং মহাপরাক্রমশালী”। [সূরা যারিয়াত ৫১:৫৬-৫৮]

 

যদি আত্মাকে স্বভাবধর্মের উপর ছেড়ে দেয়া যায় তাহলে দেখা যাবে, আত্মা আল্লাহ্‌র দেবত্ব স্বীকার করছে, তাঁকে ভালোবাসছে, শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করছে, তাঁর সঙ্গে অন্য কারো ইবাদত করছে না। কিন্তু যখন মানব বা জিন শয়তান কিছু মানুষের মধ্যে কুমন্ত্রণা সৃষ্টি করে এবং তাদের কুমন্ত্রণাকে তাদের শোভনীয় করে পরিবেশন করে তখন স্বভাবধর্ম বিঘ্নিত হয় এবং আল্লাহ্‌র নিরঙ্কুশ ইবাদত হতে বিমুখ হয়ে যায়। অতএব তাওহিদই হলো মানুষের ফিত্‌রাতের মূল ও মজ্জা। অপরপক্ষে শির্‌ক এর পরিপন্থী এবং এমনই জিনিস যা এর মধ্যে ভ্রান্ত পথে ঢুকে পড়ে।

 

[২] মূর্তিপূজার সূচনা

প্রথমে মানবজাতি তাওহিদ এবং এক আল্লাহর নিরঙ্কুশ ইবাদতের উপর ঐক্যবদ্ধ ছিল। অতঃপর শির্ক মন্থরগতিতে তাদের উপর আক্রমণ করে। এই বিশ্বাসের ভিত্তি আল্লাহ্‌ তাআলার এই বাণী :

 “মানবজাতি একই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল, অতঃপর আল্লাহ্‌ সুসংবাদবাহক ও ভয় প্রদর্শকরূপে নবিগণকে প্রেরণ করলেন”। [সূরা বাকারা ২:২১৩]

 

সমগ্র মানবজাতি এক উম্মতই ছিল, অতঃপর তারা মতভেদ সৃষ্টি করল”। [সূরা ইউনুস ১০:১৯]

 

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করছেন : “নূহ এবং আদমের মাঝে দশটি প্রজন্ম ছিল। তারা সকলেই সত্যের বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, অতঃপর তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাই আল্লাহ্‌ তাআলা সুসংবাদবাহক এবং সতর্ককারীরূপে নবিদেরকে প্রেরণ করেন”।

 

তাই নবি নূহ (আঃ)-এর যুগে তাঁর উম্মতের মধ্যে শির্‌ক বিস্তার লাভ করেছিল এবং তারা আল্লাহ্‌ তাআলার ইবাদতের সাথে সাথে মূর্তিপূজা শুরু করেছিল। আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন :

“আমি নূহ (আঃ)-কে তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট রসূলরূপে প্রেরণ করেছি, (নূহ বললেন) আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট ভয় প্রদর্শনকারী। তোমরা আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না”। [সূরা হূদ ১১:২৫-২৬] [৫]

 

৩। শির্‌কের উৎপত্তি

মৃত ধার্মিক মুসলমানদের শ্রদ্ধা ও প্রশংসায় অতিরঞ্জন হতেই শির্‌কের সূত্রপাত হয়। মানুষ তাদেরকে অতিরিক্ত ভালোবাসত, তাই তারা তাদেরকে মূর্তির আকার দিয়ে আল্লাহ্‌ তাআলার সাথে সাথে তাদেরও পূজা করত এবং তাদের নিকট প্রার্থনা করত। সুতরাং মানুষ কেন ভাবল যে, তাদেরকে আল্লাহ্‌ তাআলার ইবাদতের সাথে সাথে এই সমস্ত ধর্মনিষ্ঠ লোকদের পূজা করতে হবে ? এ কথা বোঝার প্রয়োজন আছে।

 

[4] মৃতকে সুপারিশকারীরূপে গ্রহণ

আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন :

 “আমি এই কিতাব তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি সত্যতা সহকারে, সুতরাং তুমি আল্লাহ্‌র ইবাদত করো তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে। নিশ্চয়ই দ্বিন, ইবাদত ও আনুগত্য কেবল আল্লাহ্‌র জন্য। কিন্তু যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, (তারা বলে :) আমরা তো এদের এজন্যই পূজা করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহ্‌র সান্নিধ্যে এনে দেবে। তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করেছে আল্লাহ্‌ তাআলা তার ফায়সালা করে দেবেন। যারা মিথ্যাবাদী ও কাফির, আল্লাহ্‌ তাআলা তাদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন না”। [সূরা যুমার ৩৯:২-৩]

 

 “আর তারা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে এমন বস্তুসমূহের উপাসনা করে যারা তাদের কোনো অপকার করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না, আর তারা বলে : এরা তো আল্লাহ্‌র নিকট আমাদের সুপারিশকারী। তুমি বলে দাও : তোমরা কি আল্লাহ্‌কে আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবীর এমন কিছু সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন ? আল্লাহ্‌ তাদের মুশরিকি কার্যকলাপ হতে অনেক উর্ধ্বে”। [সূরা ইউসুফ ১০:১৮]

 

এই দুটি আয়াতে আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদেরকে জানিয়ে দেন যে, মূর্তিপুজকরা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে কিছু সৃষ্টিকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে। তারা আল্লাহ্‌র সাথে সাথে তাদেরও পূজা করে, তাদের নিকট প্রার্থনা করে, তাদের উপর প্রত্যাশা রাখে, তাদেরকে ভয় করে, তাদের জন্য উৎসর্গ করে ও বলিদান দেয়, অতঃপর তারা দাবি করে যে, এই সমস্ত ওয়ালিদের উপাসনা করলে তারা তাদেরকে আল্লাহ্‌ তাআলার সান্নিধ্যে এনে দেবে। তারা তাদের এবং আল্লাহ্‌ তাআলার মাঝে সুপারিশকারীর কাজ করবে।

 

[৫] আল্লাহ্‌ ব্যতীত কাউকে আহ্বান করা শির্‌ক

রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন : “যে কেউ আল্লাহ্‌র পরিবর্তে অন্য কারো নিকট দুআ করে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে”। [৮]

 

তথ্যসূত্র

[১] তাওহিদ : এর অর্থ ও শ্রেণিবিভাগ, মুহাম্মাদ বিন সালিহ্‌ আল-উসাইমিন, http://abdurrahman.org/others/authentictranslations.com/misau_tawheed.pdf

[২] http://www.ilmforus.com/tawheed.html

[৩] তাওহিদ : এর অর্থ ও শ্রেণিবিভাগ, মুহাম্মাদ বিন সালিহ্‌ আল-উসাইমিন, http://abdurrahman.org/others/authentictranslations.com/misau_tawheed.pdf

[৪] http://abdurrahman.org/tawheed/importanceoftawheed.html

[৫] শার্‌হু কিতাবুত তাওহীদ, আল্লামা আব্দুর রহমান আস-সা’দী,  http://www.almuflihoon.com/index.php?option=com_content&view=article&id=76:the-virutes-and-excellence-of-tawheed&catid=34:aqeedah&Itemid=140

[৬] http://forums.islamicawakening.com/f15/the-implications-of-tawheed-21269/

[৭] [৮] http://sunnahonline.com/ilm/istiqaamah/july1997_f.htm

2180 Views
Correct us or Correct yourself
.
Comments
Top of page