কুফ্র (অবিশ্বাস ও তার বিভিন্ন কার্যকলাপ) প্রধানত কুফ্র হলো ঈমানের কোনো শাখার প্রতি অবিশ্বাসের নাম। ঈমানের শাখাগুলি হলো : (ক) আল্লাহ্, (খ) তাঁর ফেরেশ্তাগণ, (গ) তাঁর নবি-রসূলগণ, (ঘ) তাঁর ঐশী গ্রন্থসমূহ, (ঙ) কিয়ামতদিবস এবং (চ) ভাগ্য ও তার ভলোমন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। মহা কুফ্র (আল-কুফ্র আল—আকবার) এই ধরনের কুফ্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলামের পরিমণ্ডল হতে বহিষ্কার করে দেয়। এই বৃহৎ কুফ্র পাঁচ শ্রণির : ক) কুফ্র আত-তাকযিব। ঐশী সত্যতার প্রতি অবিশ্বাস বা ঈমানে কোনো শাখা অস্বীকার করার নাম কুফ্র আত-তাকযিব। মহান আল্লাহ্ বলেন : “ওই ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক অত্যাচারী আর কে হতে পারে যে আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা বলে এবং যখন তার নিকট সত্য (এই কুরআন, নবি মুহাম্মাদ (স.), ইসলামি তাওহিদ, পুনরুত্থান এবং সৎকর্ম বা অসৎকর্ম অনুযায়ী পুরুস্কার বা শাস্তি) আসে তখন তা প্রত্যাখ্যান করে ? কাফিরদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয় ?” [সূরা যুমার, ৩৯:৩২] খ) কুফ্র আল—ইবা ওয়াত-তাকাব্বুর মা’আত তাসকিব। ওগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে দৃঢ় বিশ্বাস হওয়ার পরও অহংকারবশত আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশাবলির আনুগত্য করতে অস্বীকার করা। মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেন : “স্মরণ করো ওই সময়কে যখন আমি ফেরেশ্তাগণকে বলেছিলাম : তোমরা আদমকে সেজদা করো, ইবলিস ব্যতীত সকলেই সেজদা করেছিল। সে অগ্রাহ্য করল ও অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল”। [সূরা বাকারা ২:৩৪] গ) কুফ্র আশ্-শাক ওয়ায-যান। ঈমানে ছয়টি স্তম্ভে সন্দেহপোষণ করা বা পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস না রাখা। আল্লাহ্ তাআলা বলছেন : “এভাবে নিজের উপর অত্যাচার করে সে উদ্যানে প্রবেশ করল। সে বলল : আমি মনে করি না যে, এটা কখনো ধ্বংস হবে। আমি মনে করি না যে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে, আর আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হই তাহলে আমি এটা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্থান পাব। তার বন্ধু তার সঙ্গে আলাপ করার সময় বলল : তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা হতে ও পরে শুক্ত হতে এবং তারপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মানুষের আকৃতিতে ? কিন্তু আমি (বলি) : আল্লাহ্ই আমার প্রতিপালক, আর আমি আমার প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে শরিক করি না”। [সূরা কাহ্ফ, ১৮:৩৫-৩৮] ঘ) কুফ্র আল-ই’রাদ। এই কুফ্র মানুষকে সত্য হতে বিভ্রান্ত করে দেয়, আল্লাহ্ তাআলা যেসব সুস্পষ্ট নিদর্শন অবতীর্ণ করেছেন সেগুলো হতে বিমুখ করে দেয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেন : “আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবী এবং এতোদুভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছুই আমি সৃষ্টি করেছি সত্যের সাথে এবং নির্দিষ্ট কালের জন্য। কিন্তু অবিশ্বাসীরা ওই সমস্ত বিষয় হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় যা হতে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে”। [সূরা আহ্ক্বাফ, ৪৬:৩] ঙ) কুফ্র আন-নিফাক্ব। কপটাচারী অবিশ্বাস। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন : “তারা তাদের শপথগুলোকে ঢালরূপে ব্যবহার করেছে; আর তারা আল্লাহ্র পথ হতে (মানুষকে) প্রতিহত করেছে। তারা যা করে তা কতই না মন্দ ! এটা এই জন্য যে, তারা ঈমান আনার পর কুফ্র করেছে, ফলে তাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছে, তাই তারা কিছু বোঝে না”। [সূরা মুনাফিকুন ৬৩:২-৩] ক্ষুদ্র কুফ্র(আল-কুফ্র আল—আসগার) এই ধরনের কুফ্র মানুষকে ইসলামের পরিমণ্ডল হতে বহিষ্কার করে না। এটাকে কুফ্র আন-নি’মাহ্ও বলে। এর অর্থ : আল্লাহ্ তাআলা যে সমস্ত নেয়ামত দান করেছেন, যে কল্যাণ প্রদান করেছেন তার প্রতি অকৃতজ্ঞ থাকা। আল্লাহ্ তাআলা বলেন : “আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের (মক্কার) যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত যেখানে আসত চতুর্দিক হতে প্রচুর জীবনোপকরণ, কিন্তু আল্লাহ্র নেয়ামতসমূহকে তারা অস্বীকার করল; ফলে আল্লাহ্ তাদের কৃতকর্মের বিনিময়ে তাদেরকে স্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদন দ্বারা”। [সূরা নাহ্ল, ১৬:১১২] প্রমাণপঞ্জী পরিশিষ্ট II, পবিত্র কুরআনের অনুবাদ, ডা. মুহাম্মাদ তাকিউদ্দিন হিলালি এবং ড. মুহাম্মাদ মুহ্সিন খান |