আল্লাহ্‌র অধিকার


স্বীয় বান্দাদের উপর আল্লাহ্‌ তাআলার যে সমস্ত অধিকার রয়েছে, সেগুলো প্রদান করা তাদের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ্‌ তাআলা প্রকৃত স্রষ্টা ও বিশ্বের পরিচালক। তিনি সেই সর্বশক্তিমান যিনি প্রত্যেকটি জিনিস পরম প্রজ্ঞার সঙ্গে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্‌ তাআলা সেই একক সত্তা যিনি প্রতিটি বস্তুকে অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন। তিনি সেই একক সত্তা যিনি মানবজাতিকে তাদের মাতৃগর্ভে, শৈশবে, বাল্যকালে ও যৌবনে রক্ষা করেন। তিনি একা সমগ্র মানবজাতিকে পরিচালিত করেন এবং তাদেরকে পানাহার ও যাবতীয় জীবনোপকরণ সরবরাহ করেন।  

 

বিষয়সূচি

 

কুর্‌আন

আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন (আয়াতের ভাবার্থ) : “আর আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে নির্গত করেছেন এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। আর তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টশক্তি এবং হৃদয় যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো”। [সূরা নাহ্‌ল ১৬:৭৮]  

 

যদি আল্লাহ্‌ তাআলা কাউকে জীবনোপরণ দিতে অস্বীকার করেন তাহলে সে মুহূর্তমধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ্‌ তাআলার অনুগ্রহই প্রতিটি মানুষ ও প্রতিটি জিনিসকে বাঁচিয়ে রাখে।

 

হাদিস

কোনগুলি মহাপাপ, সেকথা আল্লাহ্‌র রসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামবলে দিয়েছেন, অথবা তাঁকে মহাপাপগুলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন : “ইবাদতে আল্লাহ্‌র সঙ্গে অংশীস্থাপন”।(সহি বুখারি ৮:৮)  অতএব, মানবজাতির উপর আল্লাহ্‌ তাআলার অধিকার হলো যে, তোমরা তাঁর  সঙ্গে অংশীস্থাপন করবে না।

 

আল্লাহ্‌র পক্ষ হতেই জীবনোপরণ

আল্লাহ্‌ তাআলার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তাঁর বান্দারা। তাঁর দান সীমাহীন। যদি মানবজীবনে তাঁর এই ভূমিকা হয় তাহলে নিশ্চয়ই তাঁর অধিকারগুলি প্রদান করা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য হবে। স্বীয় বান্দাদের নিকট হতে আল্লাহ্‌ তাআলার জীবনোপরণের প্রয়োজন নেই। তিনি বলছেন : “আমি তোমার নিকট জীবনোপরণ প্রার্থনা করি না; আমিই তোমাকে জীবনোপরণ প্রদান করি আর শুভ পরিণাম মুত্তাকিদের (যারা আল্লাহ্‌কে ভয় করে) জন্য”।[সূরা ত্বাহা ২০:১৩২]

 

সৃষ্টির উদ্দেশ্য

আল্লাহ্‌ তাআলা স্বীয় বান্দাদের নিকট কেবল একটি জিনিস চান। “আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা যেন আমার ইবাদত করে। আমি তাদের নিকট কোনো জীবিকা চাই না, আর এও চাই না যে, তারা আমার আহার যোগাবে। আল্লাহ্‌ই তো জীবিকাদাতা ও মহাপরাক্রমশালী”। [সূরা যারিয়াত ৫১:৫৬-৫৮]

 

আল্লাহ্‌ তাআলা চান যে, মানবজাতি যেন শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করে। তাঁর ইবাদতে কাউকে শরিক না করে এবং তাঁর প্রকৃত দাসত্ব গ্রহণ করে। তিনি চান যে, তারা তাঁর ইচ্ছার সামনে আত্মসমর্পণ করুক, যেভাবে তারা নিজেদের জীবনোপায়ের জন্য তাঁর নিয়ন্ত্রণের সামনে আত্মসমর্পণ করে। ইবাদতের যোগ্য কেবল সেই একক সত্তা যিনি প্রত্যেক জিনিস ও প্রত্যেক ব্যক্তির অস্তিত্বকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।

 

যাবতীয় অনুকম্পা আল্লাহ্‌র তরফে

প্রত্যেক ব্যক্তির একান্ত কর্তব্য শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ তাআলারই ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, যিনি একা তাকে তার জীবনোপায় সরবরাহ করেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন : “আর যেসব অনুগ্রহ ও কল্যাণ তোমরা ভোগ করো, তা তো আল্লাহ্‌র নিকট হতেই। অতঃপর যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে তখন সাহায্যের জন্য ব্যাকুলভাবে তাঁকেই আহ্বান করো”।[সূরা নাহ্‌ল ১৬:৫৩]

 

আন্তরিকতার সাথে চেষ্টাসাধনা

আল্লাহ্‌ তাআলা স্বীয় বান্দাদের নিকট যা চাই, তা করা খুব সহজ। যারা তাঁর ইবাদতে সচেষ্ট হয়, আল্লাহ্‌ তাদের প্রতি কঠোরতা করতে চাননি। তিনি বলছেন : “আর আল্লাহ্‌র পথে সংগ্রাম করো যেভাবে সংগ্রাম করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন (ইসলামের বাণী মানুষের কানে পৌঁছে দেয়ার জন্য)। তিনি দ্বিনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি; এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আঃ)-এর দ্বিন। তিনিই পূর্বে তথা এই গ্রন্থে তোমাদের নামকরণ করেছেন মুস্‌লিম, যাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হন এবং তোমরা সাক্ষীস্বরূপ হও মানবজাতির জন্য। সুতরাং তোমরা স্বালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করো। তিনি তোমাদের অভিভাবক। কত উত্তম অভিভাবক তিনি, কত উত্তম সাহায্যকারী তিনি !” [সূরা হাজ্জ ২২:৭৮]  

  

ইবাদতে আন্তরিকতা ও সহজভাব

আল্লাহ্‌ তাআলা চান, আমরা যেন আন্তরিকতার সাথে তাঁর ইবাদত করি এবং ধর্মীয় কর্মসমূহ পালন করি। প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্তের স্বালাত আল্লাহ্‌ তাআলার ক্ষমা নিয়ে আসে এবং নিয়ে আসে হৃদয়ের পবিত্রতা। উত্তমরূপে স্বালাত প্রতিষ্ঠা করা মুসলমানদের একান্ত কর্তব্য। “সুতরাং যথাসাধ্য তোমরা আল্লাহকে ভয় করো”। [সূরা তাগাবুন ৬৪:১৬]

 

নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “দাঁড়িয়ে স্বালাত প্রতিষ্ঠা করো; যদি তাতে সক্ষম না হও তাহলে বসে বসে প্রতিষ্ঠা করো; আর যদি সেটাও করতে না পারো তাহলে পার্শ্বভরে শুয়ে শুয়ে স্বালাত প্রতিষ্ঠা করো”। [সহি বুখারি ২:২১৮]

 

আল্লাহ্‌ তাআলা আরও চান যে, তাঁর বান্দারা তাদের অর্থ হতে একটা ছোট্ট অংশ দিক দরিদ্র, অভাবগ্রস্থ, অর্থহীন প্রবাসী ও ঋণগ্রস্থদেরকে এবং ওই সমস্ত লোককে যারা যাকাতের অর্থ নেয়ার উপযুক্ত। যাকাত একটা এতো ছোট্ট অংশ যা দিলে বিত্তবানদের কোনো ক্ষতি হয় না; অপরপক্ষে বিত্তহীনদের অসাধারণ উপকার হয়। আল্লাহ্‌ তাআলা আরও চান যে, তাঁর বান্দারা রমযানের চান্দ্র মাসে সিয়াম পালন করুক। আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন : “অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন সেই মাসের সওম পালন করে এবং যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে”। [সূরা বাকারা ২:১৮৫]

 

হজ্জব্রত পালন

এছাড়া সমস্ত মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ, যদি তারা এর সামর্থ্য রাখে। সাধারণভাবে আমাদের জন্য আল্লাহ্‌ তাআলার সমস্ত নির্দশাবলি পালন করা এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ হতে বিরত থাকা ফরজ।

 

উপরোক্ত বিষয়াদি আল্লাহ্‌ তাআলার উদ্দেশ্যে তাঁর বান্দাদের দায়িত্ব। সেগুলোর বাস্তবায়ন কোনো কঠিন কাজ নয়। কাজের তুলনায় পুরস্কার অনেক বেশি। কী ধরনের পুরস্কার পাওয়া যাবে তা আল্লাহ্‌র বাণীতে প্রণিধান করুন : “অতএব যে কেউ অগ্নি হতে বিমুক্ত হয়েছে এবং জান্নাতে প্রবিষ্ট হয়েছে, নিশ্চয়ই সে সফলকাম হয়েছে। আর পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া আর কিছু নয়”। [সূরা আল-ইম্‌রান ৩:১৮৫]

 

তথ্যসূত্র

আল্লাহ্‌র অধিকার, লেখক শায়খ মুহাম্মাদ বিন স্বালিহ আল-উসায়মিন

http://en.islamway.com/article/8761?ref=w-new

1438 Views
Correct us or Correct yourself
.
Comments
Top of page