মুহাররামইসলামের নিরিখে মুহাররাম মাস হারাম মাসগুলির মধ্যে অন্যতম একটি। এই মাসটি ইসলামি পঞ্জিকার প্রথম মাস। ইসলামি বা হিজরি পঞ্জিকা হলো একটি চান্দ্র পঞ্জিকা। এতে ১২টি মাস আছে, যেগুলির ভিত্তি চাঁদের গতি। ইসলামি ক্যালেন্ডারের প্রতিটি বছর সৌর বছরের তুলনায় ১০ দিন কমেই পূর্ণ হয়। তাই এই বর্ষপঞ্জী পরিবর্তিত হতে থাকে, পক্ষান্তরে গ্রেগোরিয়ান পঞ্জিকায় কোনো পরিবর্তন হয় না। [১]
কুরআনইসলামি পঞ্জিকায় বারোটি মাস আছে, যেমন পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে : “নিশ্চয়ইআল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারোটিআসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত(অর্থাৎ ইসলামি বর্ষপঞ্জীর ১ম, ৭তম, ১১শ ও ১২শ মাস)। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না”। [সূরা তওবা ৯:৩৬]
হাদিসআবু বাকরাহ্ (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “বছরে বারো মাস, তন্মধ্যে চারটি হারাম (মহিমান্বিত), তিনটি যথাক্রমে যুলকা’দা, যুলহিজ্জাহ্, মুহাররাম এবং চতুর্থটি হলো রজব, যা জুমাদাল উখরা ও শা’বান মাসের মধ্যবর্তী মাস”। (বুখারি : ৩১৯৭, ৪৭০৮ ও ৫৫৫০; মুসলিম : ১৬৭৯ ও আবুদাউদ : ১৯৪৭)
মুহাররাম মাসে রোযা রাখার ফজিলতআবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো : ফরজ সালাতের পর কোন সালাত এবং রমজানের রোযার পর কোন রোযা সর্বোত্তম ? তিনি উত্তর দিলেন : মধ্যরাত্রের সালাত এবং রমজান মাসের রোযার পর সবচেয়ে উত্তম রোযা হলো আল্লাহর মাস মুহাররামের রোযা”। (সহি মুসলিম : ১১৬৩ ও জামি’ তিরমিযি : ৪৩৮)
মুহাররামের দশম তারিখে রোযার ফজিলতরসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোযার বিনিময়েআল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সাগিরা)গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন”।[সহি মুসলিম : ২৬০৩]
ইতিহাসের আলোকে দশম মুহাররামইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : নবিসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় হিজরত করলেনতখন ঈহুদিসম্প্রদায়কে আশুরার দিনে রোযা পালন করতে দেখলেন। তাই তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন :“এটা এমন কোন্ দিন, যে দিনে তোমরা সওম পালন করছ ?” তারা বলল:এটি একটি মহান দিন, আল্লাহ তায়ালা এই দিনে মুসা (আ.) এবং তাঁর অনুসারী লোকজনকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার অনুসারী লোকজনকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। তাই মুসা (আ.) কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোযা রাখেন। অতএব আমরাও রোযা করি। তারপর নবিসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “তাহলে তো মুসা (আ.)-এর ব্যাপারে তোমাদের তুলনায় আমাদের অধিকারবেশি”। অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা রাখেন এবং রোযা (মুসলমানদেরকে) রাখার আদেশ দেন। [সহি বুখারি : ২০০৪; মুসলিম:২৫২০]
মুহাররামের দশম তারিখে রোযাআয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত : আশুরার দিন মানুষজন রোযা করত। রমযানের রোযা ফরজ হওয়ার পূর্বে তা ফরজ ছিল, কিন্তু যখন রমযানের রোযার আদেশ অবতীর্ণ হলো তখন এই রোযা ব্যক্তির ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হলো। যার ইচ্ছা রোযা রাখবে আর ইচ্ছা রাখবে না। (সহি বুখারি : ২০০১)
আবু সালিম হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “যার ইচ্ছা আশুরার দিন রোযা রাখতে পারে”। (বুখারি : ২০০০) [২] [৩]
গুরুত্বদুটি কারণে এই মাসকে হারাম (মহিমান্বিত) বলা হয়েছে : ১। শত্রুপক্ষ যুদ্ধের সূচনা না করলে এই মাসে যুদ্ধ করা অবৈধ। ২। এই মাসে হারামের সীমাতিক্রম করা অন্য সময়ের তুলনায় অধিক নিকৃষ্ট।
তাই তো আল্লাহ্ তাআলা এই মাসগুলিতে পাপ করতে নিষেধ করেছেন : “সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না”। [সূরা তওবা ৯:৩৬]
যদিও সীমাতিক্রম ও পাপ করা সর্বদা ও সর্বত্র হারাম ও নিষিদ্ধ, কিন্তু এই মাসগুলিতে আরও নিকৃষ্ট ও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
বিদ্বানগণের অভিমতআস্সা’দি (রহ.) বলেন (পৃ. ৩৭৩) : “সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না”-এর মধ্যে যে সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে তাথেকে দুটি অর্থ নেওয়া যেতে পারে। (১) এর দ্বারা বারোমাসের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। আল্লাহ্ বলছেন : তিনি স্বীয় বান্দাদের জন্য এগুলোকে সময়ের মানদণ্ড তৈরি করেছেন, যেন তারা সেই অনুযায়ী তাঁর ইবাদত করতে পারে, তাঁর অনুগ্রহের জন্য তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পারে এবং তাঁর বান্দাদের সেবা করতে পারে, সুতরাং এর মধ্যে নিজেদের উপর অত্যাচার করা থেকে সাবধান। (২) এই সর্বনাম দ্বারা এই চারটি মহিমান্বিত মাসের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। বিশেষত এই মাসসমূহে পাপকার্যে লিপ্ত হতে নিষেধ করেছেন। যেহেতু পাপকার্য সর্বদাই নিষিদ্ধ তাই এই সময় তো আরও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, বরং এই সময় পাপকার্য করা অন্য সবসময় থেকে অধিক নিকৃষ্ট। [৪]
আরও দেখুনরমজান; সফর; রবিউল আওয়াল; যুলহিজ্জাহ্; ইসলামি বর্ষপঞ্জী; তাওহিদের আকিদা;
তথ্যসূত্র[১] http://snahle.tripod.com/higri.htm [২] http://www.islamweb.net/emainpage/index.php?page=articles&id=155869 |
.