ইসলামের নিরিখে সাম্যসাম্য-র আভিধানিক অর্থ সমতা, সাদৃশ্য, বিশেষ করে একই অধিকার, মর্যাদা ও সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে। [১]
ইসলামের মানদণ্ডে একটি মৌলিক নীতি হলো সাম্যনীতি। অভিন্নতা বা নিয়মবন্দির জন্য সাম্যের অর্থে কোনো ভুল করা যাবে না কিংবা ওগুলোর সঙ্গে সেটাকে গুলিয়ে দেওয়া যাবে না। ইসলাম শিক্ষা দেয় যে, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্র দৃষ্টিতে সমস্ত মানুষ সমান, তবে তারা অভিন্ন নাও হতে পারে। তাদের যোগ্যতা, কর্মশক্তি, লক্ষ, সম্পদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে। [২]
গুরুত্বসাম্যের গুরুত্ব সহজেই সুনিশ্চিত হয় যে, সমস্ত মানুষ সমান। সবার অধিকার এক। একজনের অধিকার আরেকজনের মতোই। কোনো মানুষই ভিন্নতা ও অক্ষমতার সাথে বিশিষ্ট নয়। কোনো জাতি, লিঙ্গ, নর-নারী বা শিশুর সঙ্গে অন্য নর-নারী বা শিশু থেকে ভিন্ন আচরণ করা যাবে না, কোনো রাষ্ট্রে না, পৃথিবীর কোথাও না।
জাতি, বর্ণ বা ভাষার ভিত্তিতে ইসলাম মানুষের মধ্যে পার্থক্য করে না। পার্থক্য করে শুধু ‘তাকওয়া’র ভিত্তিতে।
কুরআনের প্রতিফলন“হে মানবকুল ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, এবং আমি তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যাতে তোমরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো”। [সূরা হুজরাত ৪৯:১৩]
ইসলাম ন্যায়নিষ্ঠার ধর্ম। আল্লাহ্ তাআলা বলছেন : “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানত (তোমাদের নিকট থাকা গচ্ছিত সম্পদ) তার অধিকারীকে বুঝিয়ে দাও এবং যখন তোমরা লোকদের মাঝে বিচার-মীমাংসা করবে তখন ন্যায় বিচার করো …”। [সূরা নিসা ৪:৫৮] [৩]
হাদিসসাম্যের কথা রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলছেন : “হে মানবকুল ! তোমাদের প্রভু এক এবং তোমাদের পিতা এক। তোমরা সবাই এসেছ আদম হতে এবং আদম মাটি হতে সৃষ্টি। তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র দৃষ্টিতে সবচেয়ে সম্মানী ওই ব্যক্তি যে সবচেয়ে ন্যায়বান। তাক্বওয়া ছাড়া কোনো অনারবীয়ের উপর আরবীয়ের, শুভ্রকায়ের উপর কৃষ্ণকায়ের বা কৃষ্ণকায়ের উপর শুভ্রকায়ের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই”। (মুসনাদে আহ্মাদ : ২২৯৭৮)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো : “আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় মানুষ কে ?” তিনি উত্তর দিলেন : “ওই ব্যক্তি যে মানুষের জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর”। (আত-তাবারানি আল-মাকাসিদ আল-হাসানাহ্, ২০০-২০১) [৪]
মৌলিক নীতিমালাইসলামের কাঠামোয় সাম্যের এই ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিগুলির শেকড় অতি গভীর ও সুগ্রথিত। এটা অর্জিত হয় নিম্নোল্লেখিত মৌলিক নীতিগুলি হতে : ১। সমস্ত মানুষ তাদের এক ও একই চির শাশ্বত সার্বভৌম প্রতিপালক কর্তৃক সৃষ্ট। ২। সমস্ত মানুষ মানবগোষ্ঠীর অন্তর্গত এবং সমানভাবে আদম ও হাওওয়ার বংশধারায় প্রবিষ্ট। ৩। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর সমগ্র সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহশীল ও ন্যায়বান। তিনি বিশেষ কোনো গোষ্ঠী, কাল বা ধর্মের পক্ষপাতপুষ্ট নন। সমগ্র বিশ্বের প্রতি তাঁর আধিপত্য এবং সমস্ত মানুষ তাঁর সৃষ্টি। ৪। জন্মগত ও মৃত্যুগতভাবে সমস্ত মানুষ সমান। জন্মের সময় নিজের কেউ কিছু নিয়ে আসে না, অনুরূপ মৃত্যুর সময় পৃথিবীর কোনো কিছুই সঙ্গে নিয়ে যায় না। ৫। প্রত্যেক মানুষের ভালোমন্দ ও কর্মকাণ্ড অনুযায়ী আল্লাহ্ তাআলা তার হিসাব নেন। ৬। আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে সম্মান ও মর্যাদার সম্ভাষণে ভুষিত করেছেন।
তথ্যসূত্র[১] http://www.merriam-webster.com/dictionary/equality [২] http://www.islamweb.net/eramadan/index.php?page=articles&id=109364 [৩] [৪] http://www.islamreligion.com/articles/245/ [৫] http://www.islamweb.net/eramadan/index.php?page=articles&id=109364 |
.