আল্লাহ্র প্রতি ঈমান (বিশ্বাস স্থাপন) ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ্, তাঁর ফেরেশ্তাগণ, গ্রন্থসমূহ, নবি ও রসূলগণ, শেষ দিবস (কিয়ামতদিবস) এবং ভাগ্যের ভালো-মন্দের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করার নাম আকিদা। এগুলোকে ঈমানের স্তম্ভ বলা হয়। আকিদা হলো তাওকিফি, অর্থাৎ এমন বিশ্বাস যা ইসলামি শরিয়তের অকাট্য প্রমাণ ব্যতীত সাব্যস্ত করা যায় না। আর সেই প্রমাণগুলি হলো : কুরআন (আল্লাহ্র মহাগ্রন্থ) এবং সুন্নাহ্ (আল্লাহ্র নবির হাদিস)। আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ঈমানের প্রথম স্তম্ভ এবং ইসলামের সারাংশ। বলা হয় : “লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” (আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই)।এটাকেই আরবি ভাষায় তাওহিদ বলা হয়। আল্লাহ্ সুবনাহু ওয়া তাআলা বলছেন : “তোমাদের উপাস্য এক, অদ্বিতীয়। সেই সর্বপ্রদাতা করুণাময় অসীম দয়ালু (আল্লাহ্) ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই"। (সূরা বাকারা ২:১৬৩) আল্লাহ্র প্রতি ঈমানের অর্থ: আল্লাহ্র প্রতি ঈমান চারটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ১। আল্লাহ্র অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। ২। আল্লাহ্ই সর্বসৃষ্টির প্রতিপালক, এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। ৩। এই বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহ্ই একমাত্র অদ্বিতীয় উপাস্য। ৪। আল্লাহ্র নামসমূহ ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহ্র অস্তিত্বের প্রতি ঈমান প্রথম দৃষ্টিভঙ্গি : আল্লাহ্র অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। যা থেকে এটা সাব্যস্ত হয় তা হলো : ১। আল-ফিত্বরাহ্ (সত্যের প্রতি স্বভাবজাত ও নিরঙ্কুশ অনুরাগ), ২। আল-আক্ব্ল (যুক্তি ও পরীক্ষা-বিশ্লেষণ), ৩। আশ-শারিআহ্ (প্রত্যাদেশ ও ধর্মগ্রন্থ) ৪। আল-হিস্স্ (ইন্দ্রিয়-অনুভূতি)। ১। আল্লাহ্ তাআলার অস্তিত্ব এমনই জিনিস যা প্রমাণিত হয়ে যায় যুক্তি ও মানুষের সহজাত প্রকৃতি দ্বারা। এবিষয়ে অসংখ্য প্রমাণ শরিয়তে বিদ্যমান। আল্লাহ্র যে অস্তিত্ব আছে, এর প্রমাণ মানুষের সহজাত প্রকৃতি। প্রত্যেক মানুষ তার স্রষ্টার প্রতি মজ্জাগত বিশ্বাস নিয়ে জন্মলাভ করে। আর এ সন্মন্ধে সে কিছু চিন্তা করে না অথবা তাকে কোনো শিক্ষাও দেওয়া হয় না। কোনো ব্যক্তি তার এহেন সহজাত প্রকৃতি হতে বিমুখ তখন হয়, যখন তাকে ভুল পথ দেখানো হয়, বিপথগামী করা হয়। তাইতো রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন : (প্রত্যেক শিশু তার সহজাত প্রকৃতির ওপর জন্মলাভ করে, কিন্তু তার পিতামাতা তাকে বানিয়ে দেয় ইহুদি, খ্রিষ্টান বা অগ্নিপুজক)। [সহি বুখারি : ১৩৫৮ ও সহি মুস্লিম : ২৬৫৮] ২। আল্লাহর অস্তিত্ব-বিষয়ে আল-আক্ব্লের (কারণ এবং বিশ্লেষণ) প্রমাণ। এর স্বরূপ : অতীত ও বর্তমানে আমরা যে সমস্ত সৃষ্টি দেখেছি, নিঃসন্দেহে তার কোনো স্রষ্টা ও উদ্ভাবক হবেই। কারণ তাদের সৃষ্টি আপনা-আপনিই হতে পারে না। আর এটাও হতে পারে না যে, তাদের অস্তিত্বলাভ নিছকই দৈবাক্রম, ঘটনাচক্র বা কাকতালীয়। তারা নিছকই দৈবাক্রমে, ঘটনাচক্রে বা কাকতালীয়ভাবে সৃষ্টিলাভ করতে পারে না, কারণ প্রত্যেক নতুন ঘটনা সংঘটনের পশ্চাতে নিহিত থাকে উপযুক্ত কারণ। আমরা দেখছি, এই সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে বিস্ময়কর ও অত্যুৎকৃষ্ট সংযোগ, ঐক্য ও যুক্তিসিদ্ধ সম্পর্ক। কারণসমূহ ও ফলাফলের মাঝে রয়েছে পারস্পরিক সম্পর্ক। এসবকিছু এটাকে একদম অবিশ্বাস্য করে তুলে যে, সবকিছুর সৃষ্টি দৈবাক্রম বা কাকতালীয়। এসবকিছুর সৃষ্টি বা অস্তিত্বলাভ যদি আপনা-আপনিই বা দৈবাক্রমে অসম্ভব হয়, তাহলে নিশ্চয়ই এমন একজন আছেন যিনি এগুলোকে অস্তিত্ব দান করেছেন। আর তাঁর নাম হচ্ছে আল্লাহ্, নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক। আল্লাহ্ তাআলা সূরা তুরের মধ্যে এই যুক্তিসংগত ও চুড়ান্ত দলিল উল্লেখ করেছেন। তিনি বলছেন : “তারা কি কোনো কিছু ব্যতীতই সৃষ্ট হয়েছে, না তারা নিজেরাই নিজেদের স্রষ্টা?” (সূরা তুর ৫২:৩৫) এই মহাবিশ্ব নিখুঁত নিয়মে চলমান, যা কখনো বিঘ্নিত হতে পারে না। এর অংশগুলি পরস্পরের সঙ্গে কখনো সংঘর্ষিত হয় না বা পরস্পরবিরোধী হয় না। “সূর্যের পক্ষে চাঁদের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয় এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে চলছে”। (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৪০) তারা কোনো স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্ট হয়নি এবং তারা নিজেরাই নিজেদেরকে সৃষ্টি করেনি। সুতরাং নিশ্চিত যে, তাদের স্রষ্টা হলেন আল্লাহ্ সুব্হানাহু ওয়া তাআলা। এটাই কারণ যে, জুবাইর বিন মুত্য়িম (সেসময় মুশ্রিক ছিলেন) যখন রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে সূরা তুর পাঠ করতে শুনলেন এবং তিনি এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলেন : “তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই নিজেদের স্রষ্টা ? তারাই কি আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে ? আসলে তারা অবিশ্বাসী। আমার প্রতিপালকের ধনভাণ্ডার কি তাদের কাছে রয়েছে, না তারাই এই সমুদয়ের নিয়ন্তা” ? তখন তিনি বলেছিলেন : “আমার অন্তর প্রায় উড়ে যাবার অবস্থা হয়েছিল এবং সেটাই ছিল প্রথম মুহূর্ত যখন ঈমান আমার হৃদয়ে প্রবিষ্ট হয়েছিল”। (সহি বুখারি, অধ্যায় ৬৫, হাঃ ৪৮৫৪) ৩। আল্লাহ্র অস্তিত্ব প্রমাণে আশ-শারিআহ্ (প্রত্যাদেশ ও ধর্মগ্রন্থ : সমস্ত ঐশীগ্রন্থ তাঁর অস্তিত্ব প্রমাণ করে। এই সমস্ত ধর্মগ্রন্থে আল্লাহ্ তাআলা যেসব নিয়মাবলি ও পথনির্দেশিকা অবতীর্ণ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে তাঁর সৃষ্টির প্রয়োজনাদি ও কার্যক্রমের বিবরণ। এটা এর প্রমাণ যে, তারা এসেছে এক সর্বদর্শী, সর্বজ্ঞ, মহাপরাক্রান্ত ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী প্রভুর পক্ষ হতে। তাঁর সৃষ্টির জন্য কী উত্তম, তার সবকিছুই তিনি জানেন। এটাও সত্য যে, সেগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মাবলির যে বিবরণ রয়েছে, তার সঙ্গে আমাদের পরিদর্শন মিলে যায়। এটা এর প্রমাণ যে, তারা এসেছে মহাপরাক্রমশালী ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী প্রতিপালকের পক্ষ হতে যিনি পূর্বপ্রদত্ত তত্ত্বানুযায়ী অস্তিত্ব প্রদান করতে পারেন। ৪। আল-হিস্ (ইন্দ্রিয়ানুভূতি) আল্লাহ্ তাআলার অস্তিত্বকে দুভাবে প্রমাণ করে। যথা : (ক) আমরা প্রত্যক্ষ করে থাকি, যারা দুর্দশার সময় আল্লাহ্ তাআলার নিকট বীনিতভাবে ও আন্তরিকতার সাথে প্রার্থনা করে, আল্লাহ্ তাআলা তাদের প্রার্থনায় সাড়া দেন। এটা এর চুড়ান্ত প্রমাণ যে, আল্লাহ্ আছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলছেন : “স্মরণ করো নূহ্কে (আঃ), পূর্বে যখন তিনি আহ্বান করেছিলেন আমি তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলাম”। (সূরা আম্বিয়া ২১:৭৬) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলছেন : “আর (স্মরণ করো) আইয়ুবের (আঃ) কথা, যখন তিনি স্বীয় প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিলেন : কষ্ট ও দুর্দশা আমাকে ঘিরে ফেলেছে আর আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। ফলে আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম। আমি তাঁর দুঃখ-কষ্ট দূরীভুত করে দিলাম এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে তাঁর নিকট ফিরিয়ে দিলাম। তাদের সাথে তাদের মতো আরও দিয়েছিলাম আমার বিশেষ অনুকম্পা এবং ইবাদত্কারীদের জন্য উপদেশবাণী”। (সূয়া আম্বিয়া ২১:৮৩-৮৪) (খ) আল্লাহ্র নবিগণ বিভিন্ন ধরনের মু’জিযা (অলৌকিক ঘটনা) নিয়ে এসেছিলেন। অনেক মানুষ সেগুলো প্রত্যক্ষভাবে দেখেছে অথবা নির্ভরযোগ্য সূত্রে শুনেছে। সেই সমস্ত মু’জিযার মধ্যে একটি উদাহরণ সেই নিদর্শন, যেটা আল্লাহ্ তাআলা মুসা (আঃ)-কে দান করেছিলেন। আল্লাহ্ তাঁকে সমুদ্রে তাঁর লাঠির বাড়ি মারতে বললেন। ফলে সমুদ্রে পর্বতসদৃশ বারোটি শুষ্ক বিভাগে বিভক্ত হয়ে গেল আর প্রত্যেকটি বিভাগের পাশে ছিল ব্যাপক জল। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনের মধ্যে বলছেন : “অতঃপর আমি মুসা (আঃ)-এর ওপর অহি অবতীর্ণ করলাম : তুমি তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত করো। ফলে তা বিভক্ত হয়ে গেল। আর প্রত্যেক বিভাগ হয়ে গেল বিশাল পর্বতসদৃশ”। (সূরা শুআ’রা ২৬: ৬৩) দ্বিতীয় উদাহরণ ইসা (আঃ)-এর মু’জিযা। আল্লাহ্ সুব্হানাহু ওয়া তাআলা তাঁকে কবরের মৃত মানুষকে পুনর্জীবিত করার শক্তি দান করেছিলেন। কুরআনের মধ্যে আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে সেই কথার সংবাদ দিয়েছেন যেটা ইসা (আঃ) বলেছিলেন : “… আমি আল্লাহ্র অনুমতিতে মৃতকে জীবিত করি”। (সূরা আল-ইমরান ৩: ৪৯) আল্লাহ্র রবুবিয়্যাতের (প্রভুত্বের) প্রতি ঈমান এটাই আল্লাহ্র প্রভুত্বের অর্থ। অর্থাৎ আল্লাহ্ একমাত্র স্রষ্টা, অধিপতি এবং সর্বপ্রকার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনায় তিনি একক ও অদ্বিতীয়। এগুলোর একটি আরেকটি ছাড়া কোনো কাজে আসে না বা আল্লাহ্র প্রভুত্বের প্রতি কারো ঈমান পুর্ণাঙ্গতা লাভ করে না। আল্লাহ্ হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা। তিনি সবকিছুকে অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন। “তিনি হচ্ছেন আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবীরসৃষ্টিকর্তা”। (সূয়া আল-বাকারা ২:১১৭) “যাহতীয় প্রশংসা আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্রই”। (সূরা ফাতির ৩৫:১) এই বিশ্বাস রাখা যে, তিনিই একমাত্র প্রতিপালক, তাঁর কোনো অংশীদার বা সহযোগী নেই। রব্ (প্রতিপালক) এক, একমাত্র তিনিই ক্ষমতা রাখেন সৃষ্টির, নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণের। আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো স্রষ্টা নেই। আল্লাহ্ ব্যতীত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী কেউ নেই। আল্লাহ্ ছাড়া কেউ সবকিছুর পরিচালক নেই। আল্লাহ্ বলছেন : “জেনে রেখো, সৃষ্টিকর্তা একমাত্র তিনিই, হুকুমের মালিক একমাত্র তিনিই”। (সূরা আ’রাফ ৭:৫৪) “তুমি বলো, কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবিকা দান করেন ? কে চোখ-কানের ওপর আধিপত্ব রাখেন ? আর কে জীবন্তকে মৃত হতে এবং মৃতকে জীবন্ত হতে বের করেন ? কে সমস্ত কাজ পরিচালিত করেন ? তারা বলবে : আল্লাহ্। অতএব তুমি বলো : তাহলে তোমরা কেন ভয় করো না ?” (সূরা ইউনুস ১০:৩১) “তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালিত করেন। অতঃপর একদিন সবকিছুই তাঁর সমীপে সমুত্থিত হবে”। (সূরা আস্-সাজ্দা ৩২:৫) “তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের প্রতিপালক। সার্বভৌমত্ব তাঁরই। আর তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো তারা তো খেজুরের আঁটির সামান্য আবরণের মালিক নয়”। (সূরা ফাতির ৩৫:১৩) যে ব্যক্তি কেবল এই প্রকার তাওহিদে (তাওহিদে রবুবিয়্যাহ্) বিশ্বাসী সে ইসলামে প্রবিষ্ট হয় না। সে জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ড হতে মুক্তি পাবে না। অবিশ্বাসীরাও আল্লাহ্ প্রভুত্বের একত্ব ও অদ্বিতীয়তার কথা স্বীকার করেছিল, কিন্তু তাদের এই স্বীকারোক্তি তাদেরকে ইসলামে প্রবিষ্ট করে দেয়নি। আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে অবিশ্বাসী ও মুশরিক বলে অভিহিত করেছেন। আর ঘোষণা করেছেন যে, তারা জাহান্নামের আগুনে চিরকাল দাহিত হবে। অথচ তারা আল্লাহ্ তাআলার প্রভুত্বের প্রতি বিশ্বাস রাখত। সুতরাং কোনো ব্যক্তি কেবল তাওহিদে রবুবিয়্যাহ্ মেনে নিলেই বিশুদ্ধ অর্থে আল্লাহ্র একত্ববাদে বিশ্বাসী বলে পরিগণিত হতে পারে না, যতক্ষণ না সে তাওহিদে উলুহিয়্যাহ্র কথা ঘোষণা করে এবং বাস্তবে তা রূপায়িত করে। তাওহিদে রবুবিয়্যাহ্র জন্য একান্ত প্রয়োজন তাওহিদে উলুহিয়্যাহ্, অর্থাৎ যে ব্যক্তি তাওহিদে রবুবিয়্যাহ্র কথা ঘোষণা করে এবং সাক্ষ দেয় যে, আল্লাহ্ বতীত মহাবিশ্বের স্রষ্টা, নিয়ন্তা ও পরিচালক কেউ নেই, তার জন্য একান্ত কর্তব্য হলো তাওহিদে উলুহিয়্যাহ্ স্বীকার করা। অর্থাৎ সে সাক্ষ দেবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া কেউ কোনো প্রকার ইবাদতের যোগ্য নয়। আল্লাহ্ ব্যতীত কারো নিকট সাহায্য কামনা করা যাবে না। আল্লাহ্ ছাড়া কারো ওপর ভরসা করা যাবে না। আল্লাহ্ ছাড়া কারো জন্য কুরবানী করা যাবে না। আল্লাহ্ ব্যতীত কারো জন্য কোনো প্রকার ইবাদত করা যাবে না। আল্লাহ্র উলুহিয়্যার (এককভাবে ইবাদত) প্রতি ঈমান আল্লাহ্ই সত্যিকারের উপাস্য। তিনিই একমাত্র সেই একক সত্তা যিনি ইবাদত-বন্দেগির উপযুক্ত। এই অধিকারে তাঁর কোনো অংশী নেই। ফেরেশতা কিংবা নবিও না। এটাই কারণ, প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত সমস্ত নবি ও রসূলের একটাই আহ্বান ছিল। তা হলো : “লা-ইলাহা ইল্লাহ্” (আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই)। “আমি তোমার পূর্বে কোনো নবি প্রেরণ করিনি এই অহি ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত করো”। (সূরা আম্বিয়া ২১:২৫) “আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রসূল পাঠিয়েছি আল্লাহ্র ইবাদত করবার এবং তাগুতকে বর্জন করবার নির্দেশ দেওয়ার জন্য”। (সূরা নাহ্ল ১৬:৩৬) আল্লাহ্ তাআলা বলেন : “তোমাদের মা’বুদ একমাত্র মা’বুদ। সেই মহাকরুণাময় অসীম দয়ালু ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই”। (সূরা বাকারা ২:১৬৩) তিনি আরও বলেন : “আল্লাহ্ সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই এবং ফেরেশতাগণ ও ন্যায়-নিষ্ঠাবান বিদ্বানগণও (সাক্ষ্য দেয়), তিনি ব্যতীত অন্য কোনো সত্য মাবুদ নেই; তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়”। (সূরা আল-ইমরান ৩:১৮) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন : “আমি জিন ও মানবজাতিকে কেবল আমারই ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের নিকট হতে কোনো জীবিকা চাই না এবং এও চাই না যে, তারা আমার আহার যোগাবে”। (সূরা যারিয়াত ৫১:৫৬) তাওহিদে উলুহিয়্যাহ্ সমস্ত নবি ও রসূলের ডাক। তাঁরা স্ব-স্বজাতিকে কেবল আল্লাহ্র ইবাদতের প্রতি আহ্বান করেছিলেন। এই শ্রেণির তাওহিদই ছিল নবিগণ ও তাঁদের জাতিসমূহের মধ্যে দ্বব্দ্ব ও বিবাদের কারণ। এই তাওহিদের জন্যই নবিগণ মুশরিকদের সঙ্গে লড়াই করেছেন যতক্ষণ না তারা শির্ক বর্জন করেছে। আল্লাহ্র নামসমূহ ও গুণাবলির প্রতি ঈমান আল্লাহ্ তাআলার আসমা ওয়াস্-সিফাত (নামসমূহ ও গুণাবলি)-এর প্রতি ঈমানের অর্থ : আল্লাহ্ তাআলার সর্বোপযুক্ত মর্যাদা ও মহিমা অনুযায়ী এবং কোনো তাহ্রিফ (বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা),তা’তিল (অস্বীকৃতি),তামসিল (সাদৃশ্য-প্রদান) ও তাকয়িফ (আকৃতি প্রদান) ছাড়াই তাঁর নামসমূহ ও গুণাবলি স্বীকার করা ও ঘোষণা করা ঠিক সেভাবে, যেভাবে আল্লাহ্ তাআলা স্বীয় গ্রন্থে ও তাঁর নবির সুন্নাতে ঘোষণা করেছেন। ধর্মনিষ্ঠ পূর্বপুরুষগণ মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বিবৃত বাণীর আনুগত্যের মধ্যে আল্লাহ্ তাআলার নামসমূহ ও গুণাবলির কথা ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলছেন : “আর আল্লাহ্র অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ও উত্তম নাম রয়েছে; সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাকো। আর তাঁদেরকে বর্জন করো যারা তাঁর নাম বিকৃত করে। সত্বরই তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে”। (সূরা আ’রাফ ৭:১৮০) এই আয়াত প্রমাণ করে যে আল্লাহ্ তাআলার অসংখ্য সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। আল্লাহ্ বলেন : “আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই (অর্থাৎ তিনি ব্যতীত কেউ উপাস্য হওয়ার অধিকার রাখে না এবং তাঁর সমুতুল্য কিছুই নেই) এবং তিনিই পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়”। (সূরা আর-রুম ৩০:২৭) এই আয়াত প্রমাণ করে যে পূর্ণাঙ্গতার বৈশিষ্টসমূহ তাঁরই সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ সর্বোচ্চ মর্যাদা হলো পূর্ণাঙ্গতার বৈশিষ্ট্য। এই সাধারণ দুটি আয়াত দুটি বিষয় সাব্যস্ত করছে : ১। আল্লাহ্র নামসমূহ ও ২। আল্লাহ্র বৈশিষ্ট্যসমূহ। এর বিবৃতির বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহ্র মধ্যে অসংখ্য তথ্য বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন : “কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। (সূরা শুরা ৪২:১১) আল্লাহ্র নামসমূহ ও গুণাবলি জ্ঞানের সেই বিভাগ যাতে উম্মতের মধ্যে বিশাল মতবিরোধ, অমিল ও বিবাদ দেখা গেছে। আল্লাহ্র এই গুণবাচক নামসমূহ নিয়ে উম্মত ক্ষুদ্র ক্ষদ্র দলে বিভক্ত হয়েছে। এই বিভাজনের সময় মতপথ হবে আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশ। আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন : “যদি তোমাদের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে সেটাকে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের দিকে প্রত্যেবর্তিত করো, যদি তোমরা আল্লাহ্ ও পরকালকে বিশ্বাস করো”। (সূরা নিসা ৪:৫৯) আমরা এই মতবিরোধকে আল্লাহ্র গ্রন্থ ও তাঁর নবির সুন্নাতের দিকে প্রত্যাবর্তিত করি। এগুলোর মধ্যেই পথনির্দেশনা অনুসন্ধান করি। এর জন্য আমরা সত্যনিষ্ঠ পূর্বপুরুষগণ, সাহাবাবর্গ ও তাবিঈনদের পথ অবলম্বন করি। কারণ, তাঁরাই ছিলেন উম্মতের মধ্যে কুরআন ও হাদিসের শ্রেষ্ঠতম জ্ঞানী। এটাই ছিল আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের উদ্দেশ্য। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাস্উদ (রাঃ) নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের বিবরণ দিতে গিয়ে সত্যই বলেছিলেন : “যে কেউ কোনো পথের অনুসরণ করতে চায়, সে যেন এমন এক ব্যক্তির পথের অনুসরণ করে যে মৃত্যুবরণ করেছে। কারণ, যে ব্যক্তি এখনো জীবিত, সে যে কুকর্মে প্রবৃত্ত হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সাহাবাহর্গই ছিলেন উম্মতের মধ্যে মনের দিক হতে বিশুদ্ধতম মানুষ এবং তাঁরা ছিলেন গভীরতম জ্ঞানের অধিকারী। তাঁরা একদমই জটিল ও মিথ্যা যুক্তি দ্বারা কাউকে বিপথগামী করার মানুষ ছিলেন না। তাঁরা সেই মানুষ যাঁদেরকে আল্লাহ্ তাআলা স্বীয় দ্বিন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং স্বীয় নবির সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। অতএব জ্ঞান ছিল তাঁদের অধিকার এবং তাঁদের পথনির্দেশনার উপযুক্ত, কারণ তাঁরা প্রকৃত পথনির্দেশিকার অনুসরণ করতেন”। যে ব্যক্তিই এই বিষয়ে ধর্মনিষ্ঠ পূর্বপুরুষগণদের পথ হতে বিমুখ হয় সে বিপথগামী ও পথভ্রষ্ট হয়ে যায় এবং মুমিনদের পরিবর্তে অন্যদের পথানুসারী হয়। ফলে সে আল্লাহ্ তাআলার সেই সতর্কবাণীর উপযুক্ত হয় যেটা তিনি এই আয়াতে দিয়েছেন : “আর সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পর যে ব্যক্তি রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং বিশ্বাসীগণের বিপরীত পথের অনুগামী হয়, তাহলে সে যাতে অভিনিবিষ্ট আমি তাকে তাতেই প্রত্যাবর্তিত করবো ও তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো; আর ওটা তো নিকৃষ্টতম প্রত্যাবর্তনের স্থান”। (সূরা নিসা ৪:১১৫) আল্লাহ্ তাআলা স্থির করে দিয়েছেন যে, সত্যি-সত্যিই সুপথগামী হওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই সেই ঈমান রাখতে হবে যে ঈমান নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সাহাবিগণ রাখতেন। যেমন তিনি বলছেন : “অনন্তর তোমরা যেরূপ বিশ্বাস স্থাপন করেছ, তদ্রূপ তারাও যদি বিশ্বাস স্থাপন করে তাহলে নিশ্চয়ই তারা সুপথপ্রাপ্ত হবে”। (সূরা বাকারা ২:১৩৭) কিন্তু এও উল্লেখ্য যে, চারটি জিনিস একান্তভাবে বর্জনীয়। তন্মধ্যে কোনো একটির মধ্যে যদি কেউ নিপতিত হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলির প্রতি তার ঈমান যথার্থ হবে না, যেমনটা তার নিকট কাম্য। যতক্ষণ এই চারটিই বর্জন করবে না, ততক্ষণ কারো ঈমান বিশুদ্ধ হবে না। সেগুলো হলো : ক) তাহ্রিফ(বিকৃতিওঅপব্যাখ্যা) খ) তা’তিল(অস্বীকৃতি) গ) তামসিল(সাদৃশ্য-প্রদান, সৃষ্টিরসঙ্গেআল্লাহ্রসাদৃশ্যবর্ণনা) ঘ) তাকয়িফ(আকৃতিপ্রদান, আল্লাহ্ আকারকীসেবিষয়েজিজ্ঞাসাবাদবাবিতর্ককরা) তাই আমাদের বক্তব্য, আল্লাহ্ তাআলার আসমা ওয়াস্-সিফাত (নামসমূহ ও গুণাবলি)-এর প্রতি ঈমানের অর্থ : আল্লাহ্ তাআলার সর্বোপযুক্ত মর্যাদা ও মহিমা অনুযায়ী এবং অর্থের মধ্যেবিকৃতি ও অপব্যাখ্যা, অস্বীকৃতি, তাঁর আকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ ও সৃষ্টির সাথে তাঁর সাদৃশ্য বর্ণনা ছাড়াই তাঁর সেই সমস্ত নামসমূহ ও গুণাবলি স্বীকার করা ও ঘোষণা করা যেগুলো আল্লাহ্ তাআলা স্বীয় গ্রন্থে ও তাঁর নবির সুন্নাতে ঘোষণা করেছেন। যে চারটি বিষয় একান্তভাবে বর্জনীয় তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ : ১। তাহ্রিফ (বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা) এর অর্থ : কুরআন ও হাদিসের বাক্যাবলির প্রকৃত অর্থের মধ্যে পরিবর্তন ও বিকৃতি ঘটানো। অর্থাৎ যে সুন্দরতম নাম ও পবিত্র গুণাবলি আল্লাহ্ তাআলার সঙ্গে সম্পর্কিত, সেগুলির অন্য অর্থ প্রকাশ করা, যেটা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের উদ্দেশ্য নয়। যেমন : আল্লাহ্র হাত। তারা হাতের অর্থকে বিকৃত করে দেয়। একথা তাদের বিভিন্ন পুস্তকে উল্লেখ আছে। তারা বলে : এটা তাঁর অনুকম্পা বা ক্ষমতার প্রতি নির্দেশ করে। ২। তা’তিল (অস্বীকৃতি) এর অর্থ : সুন্দরতম নাম ও পবিত্র গুণাবলি অস্বীকার করা এবং বলা যে, এই সমস্ত বা এর একাংশের সঙ্গে আল্লাহ্ বিশিষ্ট নয়। কুরআন ও সুন্নাহ্তে এটা প্রমাণিত যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলির মধ্যে একটিও অস্বীকার করবে সে আল্লাহ্র নামসমূহ ও গুণাবলির প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে না। ৩। তাম্সিল (সৃষ্টির সঙ্গে আল্লাহ্র সাদৃশ্য বর্ণনা) এর অর্থ : মানুষের গুণাবলির সঙ্গে আল্লাহ্র গুণাবলির সাদৃশ্যপ্রদান। যেমন এরূপ বলা যে, আল্লাহ্র হাত একজন মানুষের হাতের ন্যায়, অথবা আল্লাহ্ একজন মানুষের মতো শুনেন, অথবা আল্লাহ্ সিংহাসনের ওপর উপবিষ্ট রয়েছেন যেমন একজন মানুষ চেয়ারে বসে – প্রভৃতি। নিঃসন্দেহে সৃষ্টির গুণাবলির সঙ্গে আল্লাহ্ গুণাবলি তুলনা অনর্থ ও মিথ্যা। আল্লাহ্ তাআলা বলছেন : “তাঁর সদৃশ কিছু নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। (সূয়া শুআ’রা ৪২:১১) ৪। তাক্য়িফ (তিনি কেমন সেবিষয়ে আলোচনা করা) এর অর্থ : আল্লাহ্র গুণাবলি কেমন, সেবিষয়ে আলোচনা করা। তাতে আল্লাহ্ বৈশিষ্ট্যসমূহ কেমন সেটা কল্পনা করার চেষ্টা করে অথবা ভাষায় প্রকাশ করতে প্রয়াস পায়। নিশ্চিতরূপে এটা বাতিল। মানুষ একথা জানতে পারে না। আল্লাহ্ তাআলা বলছেন : “তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না”। (সূরা ত্বহা ২০:১১০) যে ব্যক্তি এই চারটি বিষয় হতে নিজেকে নিবৃত্ত রাখবে সে আল্লাহ্র প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস স্থাপন করবে। মালিক (রহঃ)-এর বিখ্যাত ঘটনা এর একটি উদাহরণ মালিক (রহঃ)-এর সেই উক্তি যেটা তিনি একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন। “দয়াময় (আল্লাহ্) আরশের ওপর সমুন্নীত” (সূরা ত্বহা ২০:৫) এই আয়াতের প্রেক্ষিতে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল : আল্লাহ্ তাআলা কীভাবে আরশের ওপর সমুন্নীত রয়েছেন। ইমাম মালিক প্রশ্নের বিশালতার জন্য এবং একটি যথোপযুক্ত উত্তর তৈরির উদ্দেশ্যে তাঁর মাথা অবনত করলেন, এমনকি তিনি ঘামছিলেন। অতঃপর তিনি মাথা তুলে জবাব দিলেন। সেই জবাবটি আল্লাহ্ তাআলার সমস্ত গুণাবলি বিচার করার মানদণ্ড হিসেবে গণ্য করা হয়। জবাবাটি ছিল : “ইসতিওয়া (উপবেশন) আমাদের অজানা, এর বিবরণ আমাদের বোধগম্যের বাইরে, এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন বাধ্যতামূলক এবং এবিষয়ে প্রশ্ন করা বিদআত। সুতরাং যে কেউ আল্লাহ্র গুণাবলির বিবরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে আমরা তাকে বলি : তুমি একজন বিদআতি। তোমার দায়িত্ব : যা তোমার নিকট পৌঁছেছে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং যে বিষয়ে তোমাকে জানানো হয়নি তাতে নীরবতা পালন করা। আমরাআল্লাহ্র নিকট কামনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে ঈমানের ওপর অবিচল রাখেন এবং তার ওপরেই মৃত্যু দেন। আর আল্লাহ্ই বেশি জানেন। আরও দেখুন পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, ফেরেশ্তাগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, গ্রন্থসমূহ, নবিগণ, ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও তাওহিদের আকিদা পোষণ। তথ্যসূত্র ইসলামের মৌলিকতার বিবরণ, লেখক : প্রখ্যাত পণ্ডিত শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ্ বিন উসায়মিন, ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন আবু সালমান যিয়াউদ্দিন। |